Skip to content

ব্রেইন স্ট্রোক হলে করনীয় – লক্ষণ ও চিকিৎসা

ব্রেইন স্ট্রোক কী ?

ব্রেইন স্ট্রোক বা ব্রেইন অ্যাটাক হলো মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহকারী শিরা বা ধমনী যদি কোনো উপাদানের মাধ্যমে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং তার ফলে ধমনী বা শিরা ছিঁড়ে যায়, তা-ই ব্রেইন স্ট্রোক। ব্রেইন স্ট্রোক হলে মস্তিষ্কের একটি অংশ বিকল হয়ে যায় কিংবা সম্পূর্ণ মস্তিষ্কই বিকল হয়ে যায়। মস্তিষ্কের কোনো একটি অংশ বিকল হলে মস্তিষ্কের ঐ অংশটি রোগীর শরীরের যে সকল কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতো সে সকল কাজে রোগী অক্ষম হয়ে যায়। আর সম্পূর্ণ মস্তিষ্ক বিকল হলে রোগী মারা যায়। স্ট্রোকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা পাওয়া গেলে রোগীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

ব্রেইন-স্ট্রোক-হলে-করনীয়-লক্ষণ-ও-চিকিৎসা

ব্রেইন স্ট্রোক কেন হয় বা হওয়ার কারন

ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার প্রধান কারন হলো মস্তিষ্কে রক্ত পরিবহনে বাধাপ্রাপ্ত হওয়া। মস্তিষ্কে রক্ত পরিবহনকারী কোনো ধমনী বা শিরা যদি ভিতর থেকে ব্লক হয়ে যায় এবং এর ফলে স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে বাধাগ্রস্ত হলে ওই ধমনী বা শিরা রক্তের প্রবল চাপে ফেটে যেতে পারে। এ অবস্থাটিই স্ট্রোক। ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার বেশ কয়েকটি কারন নিচে দেওয়া হলো :-

১। অতিরিক্ত ওজন থাকা বা স্থূলকায় শরীর।
২। বয়স ৫৫ এর বেশি হওয়া।
৩। উচ্চ রক্তচাপ থাকা।
৪। ডায়াবেটিস থাকা।
৫। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকা।
৬। হৃদপিন্ডের রোগ থাকা এবং ক্যারোটিড ধমনীতে রোগ থাকা।
৭। অ্যালকোহলে আসক্ত থাকা।
৮। ধূমপান করা।
৯। মাদক গ্রহন করা।

বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে যে, মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আবার একই সাথে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বয়সের উপরেও অনেকটা নির্ভর করে। বয়স ৫০-৫৫ উর্ধ্ব সিনিয়র সিটিজেনদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে।

ব্রেইন স্ট্রোকের প্রকারভেদ

ব্রেইন স্ট্রোক প্রধানত দুই ধরনের। যথা : ইস্কেমিক স্ট্রোক ও হেমোরেজিক স্ট্রোক।

১। ইস্কেমিক স্ট্রোক

এ ধরনের স্ট্রোক হয় যখন মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলো ভিতর থেকে আংশিক ব্লক হয়ে মস্তিষ্কে রক্ত পরিবহন কমে যায়। এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কোষগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সরবরাহ পায় না। রক্তনালী ভিতর থেকে বেশ কয়েকটি কারনে ব্লক হয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :- শরীরের অতিরিক্ত চর্বি রক্তনালীতে জমে রক্তনালীকে সরু করে দেয়, রক্ত তঞ্চন বা ব্লাড ক্লটের কোনো কণা রক্তে মিশে গিয়ে রক্তস্রোতে ভেসে বেড়ায় এবং মস্তিষ্কের রক্তনালীর কোনো অংশে আটকে গিয়ে রক্তনালীকে সরু করে দেয়, কিংবা অন্য যেকোনো কণার মাধ্যমে রক্তনালীর সরু হয়ে যাওয়া।

রক্তনালী যেকোনো কারনেই সরু হতে পারে। আবার বয়সের সাথে সাথেও সরু হয়। কিন্তু কিছু কারন আছে যা আপনার রক্তনালীর সরু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :-

  • ধূমপান করা।
  • উচ্চ রক্তচাপ থাকা।
  • শরীরের ওজন বেশি থাাকা।
  • রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকা।
  • ডায়াবেটিস থাকা।
  • রক্তে সুগার লেভেল বেশি থাকা।
  • মদ্যপান করা।
  • অতিরিক্ত টেনশন করা।

২। হেমোরেজিক স্ট্রোক

মস্তিষ্কের রক্তনালী ছিদ্র হয়ে কিংবা রক্তনালী ফেটে গিয়ে যে স্ট্রোক হয় সেটিই হেমোরেজিক স্ট্রোক। বাইরে ছড়িয়ে পড়া রক্ত মস্তিষ্কের কোষগুলোর উপর চাপ প্রয়োগ করে এবং কোষগুলোর ক্ষতি করে থাকে। রক্ত বাইরে ছড়িয়ে পড়ার কারনে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ ও কমে যায়।
হেমোরেজিক স্ট্রোক দুই ভাবে হতে পারে। যেমন : মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে রক্তপাত হওয়া এবং মস্তিষ্ক ও মাথার খুলির মধ্যবর্তী অংশে রক্তপাত হওয়া।
সাধারণত ইস্কেমিক স্ট্রোকের শেষ পরিণতিই হেমোরেজিক স্ট্রোক। ইস্কেমিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সরু হয়ে যাওয়া রক্তনালী যখন আস্তে আস্তে আরও সরু হয়ে শেষে রক্তনালীকে সম্পূর্ণ ব্লক করে দেয় তখনই রক্তের চাপের কারনে রক্তনালী ছিদ্র হয়ে যায় কিংবা ফেটে যায়। ইস্কেমিক স্ট্রোক হওয়ার কারন এবং হেমোরেজিক স্ট্রোক হওয়ার কারন একই।

আরও পড়ুন : ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা এবং নিষিদ্ধ খাবারের তালিকা

ব্রেইন স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ

ব্রেইন স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ জানা থাকলে এবং সে অনুযায়ী সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিতে পারলে স্ট্রোকের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে লাঘব করা সম্ভব। স্ট্রোকের বেশ কিছু লক্ষণের মধ্যে অন্যতম হলো :-

১। হাত, পা বা মুখের একপাশ হঠাৎ করে দূর্বল হয়ে পড়া বা অসাড় হয়ে যাওয়া।

২। হঠাৎ কথা বলতে অসুবিধা হওয়া। মুখে জড়তা আসা। অন্য মানুষ কী বলছে সেটা বুঝতে অসুবিধা হওয়া।

৩। হঠাৎ চোখে দেখতে অসুবিধা হওয়া। চোখের অন্ধকার দেখা, ঝাপসা দেখা কিংবা ডাবল দেখা।

৪। হঠাৎ মাথা ঘোরা এবং তাতে হাঁটতে অসুবিধা হওয়া ও ভারসাম্য রক্ষায় অসুবিধা হওয়া।

৫। হঠাৎ মাথাব্যথা করা।

৬। বাহু দূর্বলতা দেখা দেওয়া।

৭। হঠাৎ বমি হওয়া ও প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা।

৮। শরীরের একপাশ সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে যাওয়া।

ব্রেইন স্ট্রোক হলে করণীয়

ব্রেইন স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথেই রোগীকে একজন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটা মিনিট গুরুত্বপূর্ণ এবং যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে কেননা স্ট্রোকের ধরন অনুযায়ী তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নিলে রোগীর ক্ষয়ক্ষতি বহুলাংশে কমানো সম্ভব। অনেক সময় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পরিমাণ বেশি হলে তাৎক্ষণিক অপারেশনের দরকার লাগতে পারে।

ব্রেইন স্ট্রোকের চিকিৎসা

ইস্কেমিক স্ট্রোকের চিকিৎসা

এ ধরনের স্ট্রোকে ব্যবহৃত বেশ কয়েক ধরনের পদ্ধতি নিচে দেয়া হল:-

১। থ্রম্বোলাইসিস : এ পদ্ধতিতে রোগীর রক্তে এক ধরনের ইনজেকশন দেওয়া হয় যা রক্তের ক্লটকে রক্তের সাথে দ্রবীভূত করে মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে দেয়।

২। থ্রম্বেকটমি : এ পদ্ধতিতে মস্তিষ্কের ধমনীতে প্রথমে একটি ক্যাথেটার লাগানো হয়। এরপর এই ক্যাথেটার দিয়ে ধমনীর ভিতর একটি যন্ত্র ঢুকিয়ে দেয়া হয় যা ধমনীর গাত্রে লেগে থাকা ব্লাড ক্লটকে ভেঙ্গে রক্তের সাথে দ্রবীভূত করে দেয়।

৩। অ্যাসপিরিন ও অন্যান্য অ্যান্টিপ্লাটিলেট : অ্যাসপিরিনের মাধ্যমে রোগীর ব্যাথা উপশম হয় এবং অ্যান্টিপ্লাটিলেটগুলো রক্তে ক্লট তৈরীতে বাঁধা দেয়। অ্যান্টিপ্লাটিলেট গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ক্লপিডোগ্রেল, ডাইপাইরিডামোল ইত্যাদি।

৪। অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট : অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট উপাদানগুলো নতুন করে ব্লাড ক্লট তৈরীতে বাঁধা দেয়। সাধারণ কিছু অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট হলো ওয়ারফারিন, এপিক্সাবান, ডাবিগাট্রান, ইডোক্সাবান, রিভারোক্সাবান ইত্যাদি।

৫। রক্তচাপের ওষুধ : স্ট্রোকের সময় সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ থাকতে পারে। উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু ওষুধ ব্যবহৃত হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : থায়াজাইড ডাই-ইউরেটিকস, এনজিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম ইনহিবিটর, ক্যালসিয়াম চ্যালেন ব্লকার, বিটা ব্লকার, আলফা ব্লকার ইত্যাদি।

৬। স্ট্যাটিন : কখনো কখনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক স্ট্যাটিন ওষুধ গ্রহণ করার পরামর্শ দেন। স্ট্যাটিন রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়। আপনার রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরল লেভেল না থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসক এই ওষুধ গ্রহণ করার পরামর্শ দিতে পারেন।

৭। ক্যারোটিড এন্ডআর্টেরেকটমি : অনেক সময় মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী ক্যারোটিড ধমনীর ভিতরের গায়ে প্ল্যাক জমা হয়ে সরু হয়ে যায়। যার ফলে ইস্কেমিক স্ট্রোক হতে পারে। এক্ষেত্রে সার্জারির মাধ্যমে ক্যারোটিড ধমনীর ভিতরের গায়ের প্ল্যাক পরিষ্কার করা হয় যাকে ক্যারোটিড এন্ডআর্টেরেকটমি বলা হয়।

হেমোরেজিক স্ট্রোকের চিকিৎসা

১। জরুরি ব্যবস্থা : যদি আপনি ব্লাড ক্লটে বাঁধা দেওয়ার ওষুধ পূর্বে গ্রহণ করে থাকেন তাহলে চিকিৎসক আপনাকে এমন ওষুধ দিবে যাতে ব্লাড ক্লটে বাঁধা দেওয়া ওষুধের কার্যকারীতা নষ্ট হয়। কেননা এ স্ট্রোকে পরবর্তীতে সার্জারির প্রয়োজন হয়।

২। সার্জারি : হেমোরেজিক স্ট্রোকে সার্জারি জরুরি হয়ে পড়ে। এ ধরনের স্ট্রোকে রক্তনালী ফেটে রক্ত বাইরে বেরিয়ে আসে এবং মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি করে। এই বাইরে ছড়িয়ে পড়া রক্ত তাড়াতাড়ি অপসারণ করার জন্য সার্জারি জরুরি হয়ে পড়ে। তাছাড়া ফেটে যাওয়া বা ছিদ্র হয়ে যাওয়া রক্তনালী ঠিক করতেও সার্জারীর দরকার হয়।

৩। সার্জিক্যাল ক্লিপিং : হেমোরেজিক স্ট্রোকে একজন বিশেষজ্ঞ সার্জন এ পদ্ধতিতে ও চিকিৎসা করে থাকেন।

৪। কয়েলিং
৫। সার্জিক্যাল এভিএম রিমোভাল
৬। স্টেরিওট্যাকটিক রেডিওসার্জারি

আরও পড়ুন : ডায়াবেটিসের লক্ষণ, চিকিৎসা ও কমানোর উপায়

ব্রেইন স্ট্রোকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া / জটিলতা

স্ট্রোকের ফলে রোগীর সাময়িক অথবা স্থায়ী বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও জটিলতা দেখা দেয়। এটা নির্ভর করে মস্তিষ্কে কত সময় ধরে রক্ত প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে কিংবা মস্তিষ্কের কোন অংশ আক্রান্ত হচ্ছে। নিচে বেশকিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা জটিলতা দেয়া হলো :-

  • প্যারালাইসিস বা পেশী সঞ্চালনে অক্ষমতা : শরীরের একটি অংশ প্যারালাইজড, কিংবা নির্দিষ্ট কিছু পেশী সঞ্চালনে অক্ষমতা তৈরী হতে পারে। এমনকি মুখমন্ডলের একটি অংশ বা একটি হাতও প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারে।
  • কথা বলতে বা খাবার গিলতে সমস্যা : ব্রেইন স্ট্রোকের ফলে মুখমন্ডলের পেশীগুলোর উপর প্রভাব পড়তে পারে যার ফলে রোগীর কথা বলতে কিংবা খাবার গিলতে সমস্যা হতে পারে।
  • স্মৃতিশক্তি হ্রাস বা চিন্তা করার ক্ষমতা হ্রাস : ব্রেইন স্ট্রোকের ফলে অনেক রোগীর স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায় এবং চিন্তা করার ক্ষমতাও হ্রাস পায়।
  • ইমোশনগত সমস্যা : অনেক ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর ইমোশনগত সমস্যা, ইমোশন কন্ট্রোলে সমস্যা হতে পারে এবং এর ফলে ডিপ্রেশনে ভুগতে পারে।
  • ব্যাথা : ব্রেইন স্ট্রোক দ্বারা আক্রান্ত শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যাথা, অসাড়তা বা অন্যান্য অস্বাভাবিক সংবেদন ঘটতে পারে।
  • আচরণে পরিবর্তন ও নিজের যত্ন করার ক্ষমতা হ্রাস : ব্রেইন স্ট্রোকে রোগীর আচরণ পরিবর্তন হতে পারে এবং রোগীর দৈনন্দিন কাজে সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে।

ব্রেইন স্ট্রোকের পরবর্তী পুনর্বাসন

আক্রান্ত ব্যাক্তিদের বিভিন্ন অক্ষমতাকে ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে কাটিয়ে তোলা সম্ভব। এটি ব্রেইন স্ট্রোকের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নিচে বেশকিছু পদ্ধতি আলোচনা করা হলো :-

১। মোটর স্কিল ব্যায়াম (Motor Skill Exercise) : শরীরের বিভিন্ন পেশীর কার্যকারীতা বাড়াতে এবং দেহের সমন্বয় সাধনের জন্য এ ধরনের ব্যায়াম অত্যন্ত উপযোগী।

২। মবিলিটি ট্রেইনিং (Mobility Training) : স্ট্রোকের ফলে যদি হাঁটায় সমস্যা হয় তাহলে এ পদ্ধতিতে হুইলচেয়ার, ক্র্যাচ, ওয়াকিং স্টিক ইত্যাদি ব্যাবহার করে পুনরায় হাঁটার জন্য প্রস্তুত করা হয়।

৩। কন্সট্রেইন্ট ইনডিউসড থেরাপি (Constraint – Induced Therapy)

৪। রেইঞ্জ অফ মোশন থেরাপি (Range of Motion Therapy)

৫। ফাংশনাল ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন (Functional Electrical Stimulation)

৬। রোবোটিক টেকনোলজি (Robotic Technology)

৭। ওয়্যারলেস টেকনোলজি (Wireless Technology)

৮। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (Virtual Reality)

৯। কগনিটিভ ডিসঅর্ডার থেরাপি (Therapy for cognitive disorders)

১০। কমিউনিকেশন ডিসঅর্ডার থেরাপি (Therapy for communication disorders)

১১। সাইকোলজিক্যাল ইভ্যালুয়েশন অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট (Psychological evaluation and treatment)

১২। মেডিক্যাশন (Medication)

১৩। ননইনভ্যাসিভ ব্রেইন স্টিমুলেশন (Noninvasive Brain Stimulation)

১৪। বায়োলজিক্যাল থেরাপি (Biological Therapy)

১৫। অল্টারনেটিভ মেডিসিন (Alternative medicine)

আরও পড়ুন : ডায়াবেটিস কি, কেন হয় এবং কত প্রকার ও কী কী ?

ব্রেইন স্ট্রোকের ওষুধ

চিকিৎসার সময় বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যাবহার করা হয়। একজন বিশেষজ্ঞ নিউরোলজিস্ট নির্ধারণ করবেন রোগীকে কী কী ওষুধ দেয়া যেতে পারে। সাধারণত ব্যবহৃত হয় এমন কিছু ওষুধের নাম নিচে দেওয়া হলো। কোনো অবস্থাতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত কোনো ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না।

১। রক্তে ক্লট বা জমাট বাঁধা রোধ করতে এসপিরিন ও বিভিন্ন অ্যান্টিপ্লাটিলেট জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ক্লপিডোগ্রেল, ডাইপাইরিডামোল ইত্যাদি।

২। রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করতে আরও কিছু অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট জাতীয় ওষুধ দেয়া হয় যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ওয়ারফারিন, এপিক্সাবান, ডাবিগাট্রান, ইডোক্সাবান, রিভারোক্সাবান ইত্যাদি।

৩। ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে সাধারণ কিছু ওষুধ হলো থিয়াজাইড ডাই-ইউরেটিকস, এনজিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম ইনহিবিটর, ক্যালসিয়াম চ্যালেন ব্লকার, বিটা ব্লকার, আলফা ব্লকার ইত্যাদি।

৪। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়।

ব্রেইন স্ট্রোকের ব্যায়াম

ব্রেইন স্ট্রোকে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় যার ফলে শরীরের কোনো অংশ বিকল হয়ে যায় কিংবা ঠিকঠাক কাজ করতে পারে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরনে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম রয়েছে যা নিচে দেয়া হলো :

    • বিভিন্ন ধরনের বোর্ড গেম খেলা।
    • বিভিন্ন ধাঁধার গেম খেলা।
    • রান্না-বান্না করা এবং নতুন নতুন রেসিপি চেষ্টা করা।
    • আঁকাআঁকি করা।
    • গান শোনা।
    • নাচা।
    • টাকা গুনা।
    • বিভিন্ন ধরনের সুডোকো ও পাজল গেম খেলা।
    • কগনিটিভ থেরাপি।
    • মেডিটেশন।
    • চারু ও কারুকলার কাজ করা।

ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা

স্ট্রোকের পর যেসকল খাবার খেলে রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করা শুরু করবে তা নিচে দেয়া হলো :-

যেসকল খাবার খাবে

১। ফলমূল ও শাকসবজি : চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিন কিছু পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি খেতে। এ সকল খাবারে আঁশ থাকে যা শরীরের জন্য ভালো। ফলমূল ও শাকসবজিতে কোলেস্টেরল থাকে না এবং এসকল খাদ্য শরীরের ব্লাড সুগার লেভেলকে ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

২। শস্যদানা থেকে উৎপাদিত খাবারসমূহ : ভাত, পাস্তা, রুটি এসকল খাবার খেতে হবে। এসকল খাবারে আঁশ থাকে এবং পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট থাকে।

৩। চর্বিহীন প্রোটিন : শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য চর্বিহীন প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। চর্বিহীন প্রোটিনের অন্যতম প্রধান উৎস হলো মুরগীর মাংস, মাছ ও ডালজাতীয় খাবার।

৪। কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধপণ্য : দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী কেননা এরা ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ এর অন্যতম উৎস। তবে অবশ্যই কম চর্বিযুক্ত হতে হবে।

৫। স্বাস্থ্যসম্মত ফ্যাট : শরীরের ফ্যাটের চাহিদা পূরণের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ফ্যাট গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে উদ্ভিজ্জ ফ্যাট সবচেয়ে উপকারী। যেমন : অলিভ অয়েল, বাদাম, অ্যাভোক্যাডো ইত্যাদি।

যেসকল খাবার পরিহার করতে হবে

১। চিনি ও চিনিযুক্ত খাবার : চিনি শরীরের ব্লাড সুগার লেভেল বাড়িয়ে দিয়ে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টির পাশাপাশি শরীরে স্থূলতা নিয়ে আসে। চিনিতে থাকা অতিরিক্ত শর্করা শরীরে জমে গিয়ে শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে।

২। লাল মাংস : গরু, ছাগল, মহিষের মাংস হলো লাল মাংস। এসকল মাংসে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট বা চর্বি থাকে এবং একই সাথে এরা উচ্চ কোলেস্টেরল যুক্ত। উচ্চ ফ্যাট এবং উচ্চ কোলেস্টেরল উভয়ই স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারন। এরা শরীরের বিভিন্ন রক্তনালীর ভিতরে জমা হয়ে রক্তনালী সরু করে দেয় এবং পরিশেষে বন্ধ করে দেয় যার ফলে স্ট্রোক, হার্ট এটাকের মতো রোগ হয়ে থাকে।

৩। উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার : উচ্চ চর্বিযুক্ত সকল খাবার পরিহার করতে হবে।

৪। উচ্চ কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার : উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত সকল খাবার পরিহার করতে হবে।

৫। বাইরের ভাজাপোড়া খাবার ও ফাস্টফুড : ভাজাপোড়া খাবার ও ফাস্টফুডে প্রচুর পরিমাণে চর্বি ও কোলেস্টেরল থাকায় এসকল খাবার অবশ্যই বর্জন করতে হবে।

৬। কোল্ডড্রিংকস : কোল্ডড্রিংকসে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে তাই এটি অবশ্যই বর্জন করতে হবে।

৭। ধূমপান ও অ্যালকোহল : অ্যালকোহল আসক্ত ও ধূমপায়ী ব্যাক্তির স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।

ব্রেইন স্ট্রোকের প্রতিরোধ

প্রতিরোধের উপায়গুলো নিচে দেয়া হলো :-

১। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ হয় এমন খাবার পরিহার করতে হবে।

২। প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন সম্ভব না হলে সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ দিন ব্যায়াম করতে হবে। অলস ব্যাক্তি দ্রুত স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ করে ফেলতে হবে।

৩। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে হবে। উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে।

৪। শরীরের ওজন বেশি হলে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। স্থূলতা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

৫। ধূমপান ও মদ্যপান করা যাবে না। এগুলো স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।

৬। ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

৭। মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে হবে।

৮। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। চিনি, চর্বি ও কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে।

Disclaimer :এ ওয়েবসাইটে দেওয়া সকল তথ্য শুধুমাত্র জানার জন্য। রোগীকে সরাসরি না দেখে এবং রোগীর পরীক্ষা না করে রোগ এবং রোগের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই নিজে নিজে কোনো ওষুধ খাবেন না। অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

References