Skip to content

ডায়াবেটিসের লক্ষণ, চিকিৎসা ও কমানোর উপায়

ডায়াবেটিসের-লক্ষণ-চিকিৎসা-ও-সারানোর-উপায়

ডায়াবেটিসের লক্ষণ

এটি এমন একটি রোগ যার ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। প্রায় ৫০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীরাই জানে না যে তাদের এ রোগ আছে কেননা এ রোগের লক্ষণগুলো খুবই সাধারণ যার ফলে রোগীরা খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। আবার টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ৭৫ শতাংশই এ রোগ থেকে বাঁচতে পারতো যদি তারা পূর্বেই সতর্ক হয়ে শারীরিক পরিশ্রম, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতো। এ রোগের লক্ষণগুলো হলো :-

  • ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া
  • ঘনঘন পিপাসা লাগা।
  • অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা।
  • শরীরের ওজন কমে যাওয়া।
  • প্রস্রাবে কিটোনের উপস্থিতি থাকা।
  • শরীর ক্লান্ত ও দূর্বল লাগা।
  • বিরক্তি ভাব থাকা।
  • চোখে ঝাপসা দেখা।
  • কোনো জায়গায় কেটে গেলে সেটা ভালো হতে দীর্ঘদিন লাগা।
  • শরীরে বিভিন্ন ইনফেকশন দেখা দেয় যেমন : ত্বক ও যোনিতে ইনফেকশন।
  • মিষ্টি জাতীয় খাদ্যের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া।
  • ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যাওয়া।

আরও পড়ুন : জন্ডিস এর লক্ষণ ও জন্ডিস হলে করনীয় কী?

ডায়াবেটিসের পরীক্ষা

টাইপ – ১, টাইপ – ২ ও প্রি – ডায়াবেটিসের জন্য যেসকল টেস্টগুলো করা হয় সেগুলো হলো :-

১। গ্লাইকেটেড হিমোগ্লোবিন (A1C) টেস্ট : এ ধরনের রক্ত পরীক্ষায় গত ২-৩ মাসের গড় ব্লাড সুগারের মাত্রা পাওয়া যায়। ডায়াবেটিসের অন্য টেস্টে যেমন একটি নির্দিষ্ট সময় না খেয়ে থাকতে হয়, এই টেস্টে সেটার প্রয়োজন পড়ে না। এটি হিমোগ্লোবিনের সাথে যুক্ত ব্লাড সুগারের মাত্রা পরিমাপ করে। হিমোগ্লোবিন হলো রক্তের একটি উপাদান যেটি অক্সিজেন বহন করে।

২। রেনডম ব্লাড সুগার টেস্ট : এ টেস্টে যে কোনো সময় শরীর থেকে রক্ত নেওয়া হয়। আপনি সর্বশেষ কখন খেয়েছেন সেটা বিবেচনা করা হয় না। এ টেস্টে ব্লাড সুগারের পরিমাণ ২০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এর বেশি হলে কিংবা ১১.১ মিলিমোল/লিটারের বেশি হলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

৩। ফাস্টিং ব্লাড সুগার টেস্ট : এই পরীক্ষার জন্য আপনাকে একটা নির্দিষ্ট সময় না খেয়ে থাকতে হবে। এ অবস্থায় ব্লাড সুগার ১০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এর কম কে নরমাল ধরা হয়। ১০০-১২৫ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার কে প্রি-ডায়াবেটিস হিসেবে ধরা হয় এবং ১২৬ মিলিগ্রাম / ডেসিলিটার বা এর বেশি কে ডায়াবেটিস হিসেবে ধরা হয়।

৪। ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট : এই পরীক্ষার জন্য সারারাত না খেয়ে থাকতে হয় এবং এরপর ব্লাড সুগার লেভেল মাপা হয়। তারপর রোগীকে একটি মিষ্টি তরল পান করানো হয় এবং পরবর্তী ২ ঘন্টা ধরে তার ব্লাড সুগার মাপা হয়।

ডায়াবেটিসের চিকিৎসা

বিভিন্ন টাইপের ডায়াবেটিসের চিকিৎসা বিভিন্ন রকম। সাধারণ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার পরিমাণ পর্যবেক্ষণ, ইনসুলিন গ্রহণ কিংবা ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা হতে পারে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এ রোগকে অনেকটাই কমিয়ে রাখা যায়।

এ রোগের চিকিৎসায় যে যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় তা হলো :-

১। রক্তে শর্করার পরিমাণ পর্যবেক্ষণ : যাদের এ রোগের মাত্রা ভয়াবহ এবং বাহির থেকে ইনসুলিন নিতে হয় তাদেরকে সাধারণত দিনে চারবার বা এর অধিক রক্তে শর্করার পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করতে হয়। আপনার চিকিৎসক বলে দিবেন আপনাকে দিনে কতবার রক্তে শর্করার পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করবেন। যাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং ইনসুলিন নিতে হয় না তাদের জন্য সাধারণত অতো বেশি রক্তে শর্করার পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করতে হয় না। যারা ইনসুলিন থেরাপি নিয়ে থাকেন তাদের কেও রেগুলার রক্তে শর্করার পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

২। A1C টেস্টিং : দৈনিক ব্লাড সুগার পরীক্ষা করার পাশাপাশি চিকিৎসক আপনাকে A1C টেস্ট করতে বলবে যার মাধ্যমে আপনি পূর্বের ২-৩ মাসের ব্লাড সুগারের একটা এভারেজ হিসাব দেখতে পাবেন।

৩। ইনসুলিন : টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ইনসুলিন থেরাপির প্রয়োজন হয়। অনেক সময় টাইপ ২ ও অন্যান্য ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেও ইনসুলিন থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের ইনসুলিন রয়েছে যেমন :-

  • Rapid acting insulin : ১৫ মিনিটের মধ্যেই কাজ করা শুরু করে এবং ২-৪ ঘন্টা পর্যন্ত এর কার্যক্ষমতা থাকে।
  • Short acting insulin(regular insulin) : ৩০ মিনিটের মধ্যেই কাজ করা শুরু করে এবং ৩-৬ ঘন্টা পর্যন্ত এর কার্যক্ষমতা থাকে।
  • Intermediate acting insulin : ২-৪ ঘন্টার মধ্যেই কাজ করা শুরু করে এবং ১২-১৮ ঘন্টা পর্যন্ত এর কার্যক্ষমতা থাকে।
  • Long acting insulin : ইনজেকশন দেওয়ার ২ ঘন্টা পর কাজ করা শুরু করে এবং ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত এর কার্যক্ষমতা থাকে।
  • Ultra-long acting insulin : ইনজেকশন দেওয়ার ৬ ঘন্টা পর কাজ করা শুরু করে এবং ৩৬ ঘন্টা বা তারও বেশি এর কার্যক্ষমতা থাকে।
  • Premixed insulin : ৫-৬০ মিনিটের মধ্যেই কাজ করা শুরু করে এবং ১০-১৬ ঘন্টা পর্যন্ত এর কার্যক্ষমতা থাকে।

আপনার চাহিদা অনুযায়ী আপনার চিকিৎসক ইনসুলিন নির্ধারণ করবেন। ইনসুলিন মুখে খাওয়া যায় না কেননা পাকস্থলীর এনজাইম একে নষ্ট করে দেয়। ইনসুলিন ইনজেকশনের মাধ্যমে সরাসরি রক্তে দিতে হয়।

৪। অন্যান্য ওষুধ : চিকিৎসক অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের ওষুধও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :-

  • আলফা – গ্লুকোসাইডেস ইনহিবিটর : এ ধরনের ওষুধ শরীরের সুগার এবং স্টার্চ ভাঙ্গনকে ধীর করে দেয়। এ ধরনের ওষুধের মধ্যে একারবোস ও মিগলিটল অন্যতম।
  • বাই গুয়ানাইড : এ ধরনের ওষুধ যকৃত দ্বারা উৎপন্ন গ্লুকোজের পরিমাণ কমায়। এ ধরনের ওষুধের মধ্যে মেটফরমিন অন্যতম।
  • ডিপিপি – ৪ ইনহিবিটর : রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • গ্লুকাগন সদৃশ পেপটাইড : অধিক ইনসুলিন ক্ষরণের জন্য অগ্ন্যাশয়কে উদ্দীপ্ত করে।
  • মেগলিটিনাইডস : অধিক ইনসুলিন ক্ষরণের জন্য অগ্ন্যাশয়কে উদ্দীপ্ত করে।
  • এসজিএল টি২ ইনহিবিটর : মুত্রের মাধ্যমে অধিক শর্করা ত্যাগে সাহায্য করে।
  • সালফোনাইলইউরিয়া : অধিক ইনসুলিন ক্ষরণের জন্য অগ্ন্যাশয়কে উদ্দীপ্ত করে।

আরও পড়ুন : সিফিলিস থেকে মুক্তির উপায় – লক্ষণ ও চিকিৎসা

ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

ডায়াবেটিস আসলে সম্পূর্ণ সারানো সম্ভব নয়। তবে সঠিক পদ্ধতিতে জীবনযাপন করলে এ রোগকে নিয়ন্ত্রণ করে সুস্থতার সাথে বেঁচে থাকা যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিম্নোক্ত ধাপগুলো মেনে চলুন।
১। সর্বদা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করুন।

২। রক্তে শর্করার পরিমাণ যতটা সম্ভব নরমাল রাখার চেষ্টা করুন। এর জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ওষুধ গ্রহণ করুন

৩। রক্তে কোলেস্টেরোল এর পরিমাণ নরমাল রাখার চেষ্টা করুন।

৪। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন যাতে ১৪০/৯০ mmHg এর বেশি না হয়।

৫। স্বাস্থসম্মত খাবার খান। এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটি ডায়েট প্লানের কোনো বিকল্প নেই। চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে একটি ডায়েট প্লান তৈরী করুন। শাকসবজি, ফলমূল, দানাদার খাবার, কম চিনিযুক্ত খাবার খান। অবশ্যই চিনি পরিহার করুন।

৬। দৈনিক ব্যায়াম করুন। ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। চেষ্টা করুন দৈনিক ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে ব্যায়াম করার। হাঁটা, হালকা দৌড়ানো (জগিং), সাঁতার ইত্যাদি করতে পারেন।

৭। অতিরিক্ত ওজন থাকলে ওজন কমান। শরীরকে সঠিক ওজনে নিয়ে এসে আরও সুস্থ জীবনযাপন করুন।

৮। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ ও ইনসুলিন গ্রহণ করুন।

৯। নিয়মিত রক্তে শর্করার পরিমাণ ও রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করুন।

১০। নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ রাখুন।

১১। ধূমপান, মদ্যপান করার অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করুন।

Disclaimer :এ ওয়েবসাইটে দেওয়া সকল তথ্য শুধুমাত্র জানার জন্য। রোগীকে সরাসরি না দেখে এবং রোগীর পরীক্ষা না করে রোগ এবং রোগের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই নিজে নিজে কোনো ওষুধ খাবেন না। অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

 

আরও পড়ুন : হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়