Skip to content

ডায়াবেটিস কি, কেন হয় এবং কত প্রকার ও কী কী

ডায়াবেটিস কী এবং কেন হয় ?

ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা ইনসুলিন সঠিক ব্যবহার করতে না পারার কারনে হয়ে থাকে। এ রোগ হয় যখন অগ্ন্যাশয় যথেষ্ট পরিমাণ ইনসুলিন উৎপন্ন করতে না পারে অথবা শরীর ইনসুলিনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারে। ইনসুলিন হলো একটি হরমোন যা অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যানস কোষ থেকে উৎপন্ন হয় এবং যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এ হরমোনটি সঠিকভাবে কাজ না করলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গিয়ে বিভিন্ন অঙ্গহানির পাশাপাশি মৃত্যুও হতে পারে।

আমরা যখন খাবার খাই, শরীরের পরিপাকতন্ত্র এ খাবার কে ভেঙ্গে গ্লুকোজে পরিণত করে। এ গ্লুকোজ রক্তে মিশে যায়। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে মস্তিষ্ক অগ্ন্যাশয়কে ইনসুলিন ক্ষরণে উদ্দীপ্ত করে। অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন ক্ষরণ করলে এ ইনসুলিন রক্তে মিশে গিয়ে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে কমিয়ে দেয়। আবার যখন রক্তে গ্লুকোজে মাত্রা কমে যায় তখন অগ্ন্যাশয় মস্তিষ্কের মাধ্যমে উদ্দীপ্ত হয়ে গ্লুকাগন নামক আরেকটি হরমোন ক্ষরণ করে। এ হরমোনটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়। ডায়াবেটিস হয় মূলত ইনসুলিনের কারনে। দেহ সঠিকভাবে ইনসুলিন উৎপন্ন করতে না পারায় কিংবা ব্যবহার করতে না পারায় রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। এজন্য কৃত্রিমভাবে ইনসুলিন নিতে হয়।

ডায়াবেটিস-কি-কেন-হয়-এবং-কত-প্রকার-ও-কী-কী

ডায়াবেটিস কত প্রকার ও কী কী ?

ডায়াবেটিস ৩ প্রকার। এগুলো হলো:

  • টাইপ – ১
  • টাইপ – ২
  • গ্যাস্টেশনাল

টাইপ – ১ ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৫-১০% রোগী এ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। টাইপ ১ সাধারণত অটোইমিউন রিয়্যাকশন এর মাধ্যমে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হয়। এ ধরনের রিয়্যাকশনে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভুলক্রমে নিজেকেই আক্রমণ করে থাকে। টাইপ – ১ ডায়াবেটিসে শরীরের ইনসুলিন উৎপাদন একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। কৃত্রিমভাবে বাইরে থেকে শরীরে ইনসুলিন দিতে হয়। তা না হলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গিয়ে রোগী মারা যাবে। এ ধরনের ডায়াবেটিস সাধারণত শিশু, কিশোর ও তরুণদের মাঝে দেখা যায়। এ ডায়াবেটিস চিকিৎসা করে সম্পূর্ণ নিরাময়ের পদ্ধতি এখনও আবিষ্কার হয় নি।

আরও পড়ুন : নিউমোনিয়া কি প্রাণঘাতি? আজই নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করুন

টাইপ – ২ ডায়াবেটিস

এ ধরনের ডায়াবেটিসে শরীরে ইনসুলিন উৎপন্ন হয় কিন্তু শরীর এ ইনসুলিন যথাযথ ব্যবহার করতে পারে না। সকল ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে এ ধরনের ডায়াবেটিসে সাধারণত ৯০-৯৫% রোগী আক্রান্ত। সাধারণত বৃদ্ধদের মাঝে এ রোগ বেশি দেখা যায় কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর ও তরুণদের মাঝেও এটি ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের ডায়াবেটিসের মূল কারণ হলো শরীরের অতিরিক্ত ওজন ও কর্মহীনতা। এ ধরনের রোগে শরীরে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না যার ফলে নিয়মিত রক্তের সুগার লেভেল টেস্ট করতে হয়। জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এ ধরনের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ জীবনযাপন করা যায়। যেমন : শরীরের ওজন কমিয়ে, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে ও দৈনন্দিন কাজকর্মে যুক্ত থেকে কিংবা দৈনিক ব্যায়াম করে।

গ্যাস্টেশনাল ডায়াবেটিস

এ ধরনের ডায়াবেটিস সাধারণত গর্ভবতী নারীদের মধ্যে দেখা যায়। এটি সাধারণত সাময়িক এবং বাচ্চার জন্মের পরেই এ রোগ ভালো হয়ে যায়। এ ধরনের ডায়াবেটিস পরবর্তীতে টাইপ – ২ ডায়াবেটিসে রূপ নিতে পারে। এ ডায়াবেটিসের কারনে গর্ভের বাচ্চা শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। বাচ্চার জন্মের পর কিশোর বা তরুণ বয়সের মধ্যেই শরীরের ওজন অতিরিক্ত হতে পারে এবং টাইপ – ২ ডায়াবেটিসে ভোগার সম্ভাবনা থাকে।

ডায়াবেটিসের মাত্রা কত এবং কত হলে তা নরমাল ?

এ রোগে আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত গ্লুকোমিটারের সাহায্যে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করে থাকেন। সাধারণত একজন সুস্থ মানুষের রক্তে সুগারের পয়েন্ট খালি পেটে ৪-৬ এবং খাওয়ার দুই ঘন্টা পর ৮ এর নিচে পর্যন্ত থাকে। খাওয়ার দুই ঘন্টা পর রক্তে সুগারের পয়েন্ট ৮ এর বেশি হলে একে প্রি – ডায়াবেটিস এবং ১১ এর বেশি হলে একে ডায়াবেটিস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। খালি পেটে ৫.৫ এর বেশি পয়েন্ট হলে প্রি-ডায়াবেটিস এবং ৭ পয়েন্টের বেশি হলে তাকে ডায়াবেটিস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

আরও পড়ুন : হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়

Frequently Asked Questions

প্রশ্ন : ডায়াবেটিসের নরমাল রেঞ্জ কত?
উত্তর : খালি পেটে ৫.৫ এর নিচে এবং খাওয়ার অন্তত দুই ঘন্টা পর ৭ এর নিচে।

প্রশ্ন : ইনসুলিন কী?
উত্তর : ইনসুলিন হলো এক ধরনের হরমোন যা অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যানস নামক অন্তঃক্ষরা কোষ থেকে ক্ষরিত হয়। ইনসুলিন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়।

প্রশ্ন : ডায়াবেটিস কি বংশগত রোগ?
উত্তর : সবসময় বংশগত নয়। তবে কখনও কখনও বংশগত রোগও হতে পারে।

প্রশ্ন : ডায়াবেটিস কি প্রাণঘাতি?
উত্তর : হ্যাঁ, সঠিক জীবনযাপনের পদ্ধতি অনুসরণ না করলে ডায়াবেটিস একটি প্রাণঘাতি রোগ।

Disclaimer :এ ওয়েবসাইটে দেওয়া সকল তথ্য শুধুমাত্র জানার জন্য। রোগীকে সরাসরি না দেখে এবং রোগীর পরীক্ষা না করে রোগ এবং রোগের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই নিজে নিজে কোনো ওষুধ খাবেন না। অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

Reference