Skip to content

টাইফয়েড জ্বর ভালো করার উপায়

টাইফয়েড কী?

টাইফয়েড বা আমরা সাধারনত টাইফয়েড জ্বর নামে যা চিনে থাকি, এটি একটি ব্যাক্টেরিয়া ঘঠিত রোগ যা সালমোনেলা টাইফি নামের একটি ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমনের ফলে এই রোগ দেখা দেয়। দুষিত খাবার ও দুষিত পানির মাধ্যমে এই ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমিত হয়। এই রোগ শিশু এবং বৃদ্ধদের মাঝে বেশি দেখা যায়। পানিবাহিত রোগ হওয়ায় বর্ষাকালে এবং বন্যার্ত অঞ্চলে এই রোগের প্রকোপ বেশি লক্ষ্য করা যায়।

টাইফয়েড জ্বরের জীবাণু

এ জ্বরের মূল জীবাণু হলো সালমোনেলা টাইফি নামক একটি জীবাণু। এটি একটি গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাক্টেরিয়া। পিয়েরে লুইস ১৮২৯ সালে সর্বপ্রথম “টাইফয়েড জ্বর” নামটির প্রচলন করেন। এটি একটি পানিবাহিত রোগ যা দূষিত পানি ও খাবার থেকে ছড়ায়। এই জীবাণু টাইফয়েড জ্বর ও কিছু ক্ষেত্রে ফুড পয়জনিং ও তৈরি করতে পারে।

টাইফয়েড-জ্বর-ভালো-করার-উপায় Typhoid Fever: Causes, Symptoms & Treatment

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ

শরীরে ব্যাক্টেরিয়া প্রবেশের সাথে সাথেই সবসময় এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়না। জীবাণু শরীরে প্রবেশের পর এর কার্যক্রম শুরু করে এবং সাধারনত ১ম সপ্তাহ থেকে ৪র্থ সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে। কারো কারো ক্ষেত্রে এই প্রকাশের মাত্রা অনেক ধীর হতে পারে। এই লক্ষণ গুলো হলোঃ

  • শরীরে ক্লান্তি ভাব চলে আসা
  • অতিরিক্ত জ্বর
  • ক্ষুদা হ্রাস পাওয়া
  • গলা ও মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা করা
  • ডায়রিয়া সহ পেটের বিভিন্ন ব্যাধি
  • প্রলাপ বকা
  • শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়া ইত্যাদি।

আরও পড়ুন : দ্রুত বীর্যপাতের কারন, চিকিৎসা ও ঔষধ

টাইফয়েড কেনো হয়?

টাইফয়েড যদিও দুষিত পানি থেকে হয়ে থাকে। তবে এর মুল কারন হলো ঐ দুষিত পানিতে বিদ্যমান দুই ধরনের জীবাণু। (০১) সালমোনেলা টাইফি এবং (০২) সালমোনেলা প্যারাটাইফি। সালমোনেলা টাইফি ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমনে এ জ্বর হয় এবং সালমোনেলা প্যারাটাইফি ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমনে প্যারা-টাইফয়েড জ্বর হয়। পরিস্কার-পরিচ্ছনতায় উদাসীনতা এবং দুষিত পানি পান করা থেকেই মূলত এই রোগ ছড়ালেও কোনো বাহক ব্যাক্তি থেকেও এই রোগ ছড়াতে পারে। অর্থাৎ, টাইফয়েড রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা রোগীরাও এই রোগের জীবাণু বহন করে। এই জীবাণু কারো শরীরে ঢুকতে পারলে তা বৃহতান্ত্রকে আক্রমন করে এবং ঐ আক্রান্ত ব্যাক্তিকেও জ্বরে অসুস্থ করে তোলে।

টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা বা প্রতিকার

রোগের লক্ষণ বুঝতে পারার সাথে সাথেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা যা যা দরকার সবই করান এবং ফলফল পজিটিভ হলে সাথে সাথে চিকিৎসা শুরু করে দিন। রোগের অবস্থা প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে এই জ্বরে খুব একটা সমস্যা হয়না। তবে, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে অবস্থা গুরুতর হয়ে যায় যা পরবর্তীতে প্রাণঘাতী হতে পারে।

রোগের অবস্থা প্রাথমিক পর্যায়ে হলে, ডাক্তার আপনাকে সাধারন ঔষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স সাজেস্ট করবেন। নিয়মিত এই ঔষুধ গুলো নিয়ম মেনে সেবন করলে ২-৩দিনের মধ্যেই ফলাফল দেখতে শুরু করবেন এবং ১ সপ্তাহের মধ্যে সুস্থতা লাভ করতে সক্ষম হবেন।

আরও পড়ুন :ইরেকটাইল ডিসফাংশন এর চিকিৎসা

তবে চিকিৎসার ফলাফল সর্বদাই নির্ভর করে আপনার রোগের তীব্রতার উপর। এ জ্বর হলে দুই ধরনের ভ্যাকসিন দেয়া হয়। একটি আপনার দেহ হতে জীবাণু-কে সম্পূর্নরূপে ধ্বংস করে দেয়। একে Inactivated Typhoid ভ্যাকসিন বলা হয়। এটি মূলত ২বছর এর বেশি বয়সের রোগীদের জন্য প্রেসক্রাইব করে থাকেন ডাক্তারেরা, যা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো হয়। যারা বিভিন্ন রোগে ভুগেন অর্থাৎ, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের এই ভ্যাকসিন ২বছর অন্তর অন্তর নিতে হয়। তাছাড়া, কোথাও ভ্রমনের ২ সপ্তাহ আগে এই ডোজ নেয়া উচিত।

আর অন্যটির নাম হলো Live Typhoid ভ্যাকসিন। এটি মুখে খাওয়ার ঔষধ। একদিন পর পর একটি করে ঔষুধ খেতে হয়। এমন ৪টি ক্যাপসুল খেতে হত। এই ঔষুধ অবশ্যই খাওয়ার ১ ঘন্টা আগে ঠান্ডা পানি দিয়ে খেতে হবে এবং ভ্রমনের অন্তত ১ সপ্তাহ আগে এটি গ্রহন করতে হবে। তাছাড়া, যারা প্রায়শই বিভিন্ন রোগে ভুগেন তাদের এই ডোজ প্রতি ৫ বছর অন্তর অন্তর নিতে হয়।

তবে আপনি যদি লক্ষণ দেখা দেয়ার পরেও চিকিৎসকের সরনাপন্ন না হোন এবং অবস্থা গুরুতর হয়ে যায়, তবে সাথে সাথেই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত। কারন এমন অবস্থায় সঠিক চিকিৎসা না নেয়া হলে এই রোগ প্রাণঘাতী রূপ নিতে পারে।

টাইফয়েড জ্বরের ঔষধের নাম

কোনো রোগের জন্যই নিজে থেকে ঔষধ সেবন করা উচিত নয়। শুধুমাত্র রেজিস্টারড এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসকের প্রেসক্রাইব ঔষুধ সেবন করুন। তাছাড়া, এটি একটি জ্বর হলেও এটি একটি গুরুতর এবং প্রাণঘাতী রোগ, তাই এক্ষেত্রে নিজে থেকে কোনো চিকিৎসা বা ঔষধ না সেবন করার পরামর্শ রইলো। শুধুমাত্র জেনে রাখার জন্য এ জ্বরের কিছু ঔষুধের নাম নিচে আলোচনা করা হলো-

এই রোগ হলে ফাস্ট জেনারেশন সিফলস্পেরিন বেশিরভাগ চিকিৎসকেরা সাজেস্ট করে থাকেন। কিন্তু এই ক্যাটাগরির ঔষধ গুলোর ক্ষমতা বেশি হওয়ায় অনেক চিকিৎসকেরাই সেফটিঅক্সিন নামক ইঞ্জেকশন করে থাকেন। এই ইঞ্জেকশন দৈনিক ১-২গ্রাম করে নিতে হয়। এই পরিমান নির্ভর করে আপনার রোগের তীব্রতার উপরে। নিয়মিত সঠিক ভাবে নিলে এই ইঞ্জেকশনে রোগী ১০-১৫ দিনের মধ্যে সুস্থতা লাভ করতে সক্ষম হন।

তবে ক্ষেত্রবিশেষে পেনিসিলিন গ্রুপের একটি ইঞ্জেকশন ও ব্যাবহারের দরকার পরে।

আমাদের অনেকের মধ্যেই জ্বর হলেই এন্টিবায়োটিক ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা শুরু করার প্রবনতা দেখা যায়। এটি কখনোই উচিত নয়। এতে করে ধীরে ধীরে শররীরে এন্টিবায়োটিক ঔষুদের কার্যক্ষমতা কমে যায়। শুরুতে paracetamol দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ করেন। বেশিরভাগ রোগী-ই ১০ দিনের মধ্যে এই চিকিৎসায় ভালো হয়ে যান। যদি, এতে কাজ না হয় তবে cefixime, ofloxancin অথবা sparfloxancin নিতে হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসক আপনার শারীরিক অবস্থা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফলের উপর বিবেচনা করে নির্ধারন করবেন যে আপনার জন্য কোন ঔষধ বেশি কার্যকরী।

আরও পড়ুন : গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায়!

টাইফয়েড জ্বরের এন্টিবায়োটিক

এ জ্বরের তীব্রতা বেড়ে গেলে এন্টিবায়োটিক ঔষধ নেয়ার দরকার পরে। সেক্ষেত্রে উপযোগী কিছু এন্টিবায়োটিক ঔষধের নাম নিচে উল্লেখ্য করা হলো। তবে, কোন ঔষধ টি আপনার জন্য যথাযথ এটি ঠিক করবেন আপনার চিকিৎসক, আপনার শারীরিক অবস্থা ও বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল বিবেচনা করে।

  • সিপ্রোফ্লোক্সাসিন (Ciprofloxacin)
  • এযিথ্রোমাইসিন (Azithromycin)
  • ক্লোরামফেনিসল (Chloramphenicol)
  • এমোক্সিসিলিন (Amoxycillin)
  • কোট্রিমোক্সাযোল (Cotrimoxazole)
  • সেফট্রিয়াক্সোন (Ceftriaxone)

শিশুর টাইফয়েড হলে করণীয়

শিশুর টাইফয়েড খুবই জটিল একটি সমস্যা। শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের বয়স অনুযায়ী তাদের রোগের লক্ষণ ও ক্ষতির মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে শিশুর এই সমস্যা-কে মাতৃগর্ভে থাকা শিশু, ১বছরের কম বয়সী শিশু এবং বয়ষ্ক শিশুর লখহন অনুযায়ী তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।

১। মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর টাইফয়েড

গর্ভাবস্থায় থাকা মায়ের যদি টাইফয়েড হয়ে থাকে তবে এই রোগের জীবাণু শিশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে যার উপসর্গ শিশুর জন্মের ৩দিনের মধ্যেই প্রকাশ পায়।

২। এক বছরের কম বয়সী শিশুর টাইফয়েড

এক বছরের কম বয়সী শিশুরা বিভিন্ন ভাবে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাদের ক্ষেত্রে রোগের মাত্রা পেটের সামান্য অসুখ থেকে শুরু করে মারাত্মক জীবনঘাতী সমস্যায় রূপ নিতে পারে। মাতৃগর্ভে থাকা আক্রান্ত শিশুর ও ১বছরের কম বয়সী আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণ গুলো এক হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ দেখা যায় তা হলোঃ

      • বমি,
      • পেট-ফাপা,
      • তীব্র জ্বর
      • ডায়রিয়া
      • খিচুনি,
      • ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি।

৩। বয়ষ্ক শিশুর টাইফয়েডের লক্ষণ

বয়ষ্ক শিশুরা সাধারন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষের মতোই দুষিত খাবার, পানি ও অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকার কারনে হতে পারে। সেক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ দেখা যায় তা হলোঃ

      • জ্বর,
      • ক্লান্তি,
      • শরীরে ব্যাথা,
      • মাথাব্যাথা,
      • ডায়রিয়া ও পেটে ব্যাথা,
      • পেটে ও বুকের নিচে ফুসকুড়ি দেখা দেয়,

করনীয়

সর্বপ্রথম চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। কোনোমতেই নিজের থেকে চিকিৎসা করা যাবে না বা চিকিৎসায় কোনো অবহেলা করা যাবেনা। শিশুকে বেশি করে তরল খাবার খাওয়াতে হবে এবং সঠিক যত্ন নিতে হবে। তাছাড়া, এই রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে শিশুকে বাচাতে শিশুকে ফুটানো পরিষ্কার পানি পান করানো, সঠিক সময়ে টাইফয়েডের টিকা দেয়া ও শিশুর মল-মূত্র সঠিকভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে।

টাইফয়েড রোগীর খাবার

এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর খাবারে অনীহা, হজমের সমস্যা, পানিশূন্যতার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য, যথেষ্ঠ পরিমানে পুষ্টিকর কিন্তু সহজে হজম হয়, উচ্চমাত্রায় ক্যালরি আছে এমন খাদ্য সরবরাহ করা উচিত। খাবার গুলো হলোঃ

১। পুষ্টিকর হালকা তরল খাবার

যেহেতু এই রোগে আক্রান্ত রোগী জ্বর ও ডায়রিয়ার কারনে পানিশূন্যতার মতো সমস্যায় ভোগে। এই পানি শূন্যতা এবং শরীরের তাপ বৃদ্ধির ফলে ক্ষয়ে যাওয়া ক্যালরির চাহিদা পূরনের জন্য ডাবের পানি, গ্লুকোজ, ফলের রসের তুলনা নেই। তাছাড়া, স্যুপ, লেবু, আধা এবং তুলসি দেয়া চা ও অনেক উপকারী। এগুলো পানিশূন্যতা পূরন, শরীর-কে দ্রুত শক্তি যোগানো সহ শরীর-কে সতেজ করে তোলে।

২। ফুটানো পানি

টাইফয়েড একটি পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি থেকেই মূলত এই রোগ ছড়ায়। তাই রোগের মাত্রা যাতে আর বৃদ্ধি না পেতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন, রোগীকে ফুটানো জীবানুমুক্ত পানি পান করতে দেয়া, রোগীর খাবার পাত্র গুলো গরম-ফুটানো পানি দিয়ে ধৌত করা ইত্যাদি।

৩। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার

এসময়ে রোগীর মধ্যে খাওয়ার অনীহা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে ভিটামিন-সি জাতীয় খাবারগুলো অরুচির সমস্যা দূর করতে পারে। তাছাড়া, ভিটামিন-সি শরীরের ইনফেকশন, প্রদাহ কমানো ও দেহের ইমিউন শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন ১-২গ্লাস করে কমলা, মালটা বা আনারসের রস পান করাটা উত্তম।

টাইফয়েড রোগীর যত্ন

টাইফয়েড হলে ঔষধের পরপর-ই সবচেয়ে দরকারী জিনিস হচ্ছে রোগীর যথাযথ যত্ন নেয়া। রোগীর ব্যাবহার করা সকল বস্তু মূলত খাবার পাত্র গুলো গরম পানিতে ফুটিয়ে পরিষ্কার করা বা ফুটানো পানি দিয়ে ধৌত করা। রোগী-কে ফুটানো বিশুদ্ধ পানি পান করানো, পুষ্টিকর ও সহজ পাচ্য খাদ্য প্রদান করা, জ্বর ছাড়লে ভেজা রুমাল বা তোয়ালে দিয়ে রোগীর শরীর মুছে দেয়া ইত্যাদি। এতে করে রোগী দ্রুত সুস্থতা লাভের পাশাপাশি শরীরে শক্তি লাভ করবে ও সাচ্ছ্যন্দ বোধ করবে।

টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে

দেহে জীবানু প্রবেশের ১-২সপ্তাহে মধ্যেই এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। দেহ সম্পূর্নরূপে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসার ধরন ও রোগীর দেহের অবস্থার উপর ভিত্তি করে ৬ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে রোগী সুস্থতা লাভ করেন। এক্ষেত্রে জ্বরের প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা শুরু করলে যথাযথ এন্টিবায়োটিক শুরুর পর ১সপ্তাহের মধ্যেই জ্বর কমতে শুরু করে।

টাইফয়েড এর ক্ষতিকর দিক

যদিও সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহন করলে এই রোগ থেকে নিরাময় লাভ করা যায়। কিন্তু, তা না হলে এই রোগ প্রাণঘাতী হতে পারে। এর ফলে মেরুদন্ড ও বৃহদান্ত্রের ক্ষতির পাশাপাশি মস্তিষ্কে ক্ষতি হতে পারে। মস্তিষ্কের এই ক্ষতি ও তীব্র জ্বরের ফলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ অবশ বা প্যারালাইসিস এর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। যা স্থায়ী হতে পারে। তাছাড়া এতে করে কিডনিতেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।

টাইফয়েড হলে করণীয়

  • টাইফয়েডের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্রই সচেতন হতে হবে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।
  • রোগীকে যথাযথ যত্ন নিতে হবে।
  • পুষ্টিকর খাবার, বিশুদ্ধ পানি পান করতে দিতে হবে।
  • রোগীর ব্যাবহৃত সকল বস্তু পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত রাখতে হবে।

Frequently Asked Questions(FAQs)

প্রশ্ন: টাইফয়েড জ্বর হলে কি গোসল করা যায় ?

উত্তর: হ্যাঁ, টাইফয়েড জ্বর হলে গোসল করা যাবে। টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসায় বা জ্বরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে এর গুরত্ব অনেক। হাসপাতালেও রোগীকে ঠান্ডা পানিতে গোসল করানো হয়। তবে এক্ষেত্রে মাথা বাদ দিয়ে পুর শরীর ভেজানো হয়।

প্রশ্ন: টাইফয়েড কি ছোঁয়াচে রোগ ?

উত্তর: হ্যাঁ, টাইফয়েড ছোঁয়াচে রোগ। এই রোগ সংক্রমিত ব্যাক্তির মল, মূত্র থেকে ছড়াতে পারে।

প্রশ্ন: টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত ?

উত্তর: টাইফয়েড হলে শরীরে দুর্বলতা ও পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই এসময়ে পুষ্টিকর হালকা তরল জাতীয় খাবার, খাবার স্যালাইন ও ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। ভিটামিন-সি দেহের প্রদাহ কমাতে ও দেহের ইমিউন শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া, যেকোনো ভাবে যাতে এই জীবানু রোগীর দেহে প্রবেশ করতে না পারে তাই সতর্কতার জন্য ফুটানো পানি পান করতে হবে।

প্রশ্ন: টাইফয়েড জ্বরের টেস্ট কি ?

উত্তর: টাইফয়েডের দুই ধরনের (টাইফয়েড ও প্যারা-টাইফয়েড-এর) উপস্থিতি জানতে রক্তে সালমোনেলা টাইফি ও সালমোনেলা প্যারাটাইফি এর উপস্থিতি নির্নয় করতে হয়। ব্লাড-কালচার নামক একটি পরীক্ষার মাধ্যমে এটি নির্নয় করা যায়।

প্রশ্ন: টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশন এর নাম ?

উত্তর: টাইফয়েডের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে Paracetamol 150mg ইঞ্জেকশন চিকিৎসকরা প্রেসক্রাইব করে থাকেন।

প্রশ্ন: টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত নয় ?

উত্তর: টাইফয়েড হলে ড্রাই-ফ্রুটস, বাদাম, দানা-জাতীয় খাদ্য ও কাচা সবজি খাওয়া পরিহার করতে হবে।

প্রশ্ন: টাইফয়েড হলে কি চুল পড়ে যায়?

উত্তর: হ্যাঁ, টাফয়েড জ্বর দীর্ঘমেয়াদি হলে এতে চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

প্রশ্ন: প্যারা টাইফয়েড কি?

উত্তর: সালমোনেলা টাইফির আক্রমনে টাইফয়েড হয় ও সালমোনেলা প্যারা-টাইফির আক্রমনে প্যারা-টাইফয়েড হয়ে থাকে।

প্রশ্ন: টাইফয়েড কি বাহিত রোগ?

উত্তর: টাইফয়েড একটি পানিবাহিত রোগ।

প্রশ্ন: টাইফয়েড কিভাবে ছড়ায়?

উত্তর: দুষিত খাবার, দুষিত খাবার ও আক্রান্ত ব্যাক্তির মল-মূত্র থেকে টাইফয়েড ছড়ায়।

প্রশ্ন: টাইফয়েড রোগের টিকা নাম কী?

উত্তর: টাইফয়েড রোগের জন্য বয়স ও রোগ ভেদে কয়েকধরনের টিকা রয়েছে। যার মধ্যে, Ty21a, Vi Capsular Polysaccharide Vaccine, Typhim Vi এবং Vi-rEPA অন্যতম।

প্রশ্ন: টাইফয়েড টেস্ট এর নাম কী?

উত্তর: ব্লাড কালচার।

প্রশ্ন: কোন বয়সের মধ্যে টাইফয়েড জ্বর বেশি হয়?

উত্তর: যেকোনো বয়সের মানুষের মধ্যেই টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার সমান সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শিশু এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল এমন মানুষ টাইফয়েডে বেশি আক্রান্ত হয়।

প্রশ্ন: প্যারাটাইফয়েড এবং টাইফয়েড জ্বরের মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর: টাইফয়েড জ্বরে সঠিক ভাবে রোগ নির্নয় করা গেলেও এর সম্বাবনা অনেক কম থাকে রোগী প্যারা-টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হলে। এক্ষেত্রে রোগ নির্নয়ে ভুল হলে ভুল চিকিৎসা গ্রহন এমনকি রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে।

প্রশ্ন: টাইফয়েডে মৃত্যুর হার কত?

উত্তর: টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যু হার ০.২ শতাংশ।

Disclaimer : এ ওয়েবসাইটে দেওয়া সকল তথ্য শুধুমাত্র জানার জন্য। রোগীকে সরাসরি না দেখে এবং রোগীর পরীক্ষা না করে রোগ এবং রোগের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই নিজে নিজে কোনো ওষুধ খাবেন না। অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

Reference