ম্যালেরিয়া কী
ম্যালেরিয়া হলো এক ধরনের মশা বাহিত সংক্রামক রোগ। ম্যালেরিয়া জ্বর প্লাজমোডিয়াম গণের পাঁচ ধরনের পরজীবীর আক্রমণে হয়ে থাকে। স্ত্রী এনোফিলিস মশার দেহে এই পরজীবী বাস করে। সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে এ জ্বরের প্রাদুর্ভাব বেশি। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এলাকায় এ রোগে আক্রান্তের হার অনেক বেশি। পূর্বে ম্যালেরিয়া একটি প্রাণঘাতি রোগ ছিলো কিন্তু বর্তমানে উন্নত চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে এ রোগ খুব সহজেই ভালো হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে এ রোগ থেকে সহজেই আরোগ্য লাভ করা সম্ভব।
ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু
ম্যালেরিয়া বিশ্বের প্রাচীনতম রোগগুলোর একটি। পূর্বে এ রোগ প্রাণঘাতী ছিলো এবং এ রোগ হলেই মৃত্যু এমন ধারণা ছিলো। বর্তমানে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতিতে এ রোগ এখন খুব সহজেই ভালো হয়। প্লাজমোডিয়াম গণের পাঁচ প্রজাতির পরজীবীর আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ পরজীবীগুলো এককোষী প্রোটিস্টা। প্লাজমোডিয়াম গণের এ প্রজাতিগুলো হলো : প্লাজমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স, প্লাজমোডিয়াম ম্যালেরি, প্লাজমোডিয়াম ওভেল, প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম ও প্লাজমোডিয়াম নোলেসি। এ গণের শ্রেণিবিন্যাসগত অবস্থান হলো –
Kingdom : Protista
Sub – kingdom : Protozoa
Phylum : Apicomplexa
Class : Sporozoa
Order : Haemosporidia
Family : Plasmodiidae
Genus : Plasmodium
Species : Plasmodium vivax, Plasmodium falciparum, Plasmodium malariae, Plasmodium ovale, Plasmodium knowlesi
একেক প্রজাতির জীবাণুর দ্বারা হওয়া ম্যালেরিয়ার ধরনও একেক রকম। প্লাজমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স দ্বারা হওয়া ম্যালেরিয়ার নাম বিনাইন টারশিয়ান ম্যালেরিয়া। এ জ্বর সাধারণত ৪৮ ঘন্টা পরপর আসে। প্লাজমোডিয়াম ম্যালেরি দ্বারা হওয়া এ জ্বরের নাম কোয়ারটার্ন ম্যালেরিয়া। এ জ্বর সাধারণত ৭২ ঘন্টা পরপর আসে। প্লাজমোডিয়াম ওভেল দ্বারা হওয়া এ জ্বরের নাম মৃদু টারশিয়ান ম্যালেরিয়া এবং এ জ্বর সাধারণত ৪৮ ঘন্টা পরপর আসে। প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম দ্বারা হওয়া এ জ্বরের নাম ম্যালিগন্যান্ট টারশিয়ান ম্যালেরিয়া এবং এ জ্বর সাধারণত ৩৬-৪৮ ঘন্টা পরপর আসে।
এ জ্বরের জীবাণু সাধারণত দুটি আলাদা প্রাণির দেহে বাস করে এবং তাদের জীবনচক্র ও প্রজননের জন্য এ দুটি প্রাণির দেহ লাগে। এ দুটি প্রাণির মধ্যে একটি হলো এনোফিলিস মশা এবং আরেকটি হলো মানুষ। মশার দেহে প্লাজমোডিয়াম জীবাণু যৌন জনন সম্পন্ন করে। তাই মশাকে এ জীবানুর নির্দিষ্ট পোষক বলা হয়। মানুষের দেহে এ জীবাণু অযৌন জনন সম্পন্ন করে তাই মানুষকে বলা হয় এ জীবাণুর মাধ্যমিক পোষক। এ জীবাণুর বংশবৃদ্ধির জন্য যৌন এবং অযৌন, দুটি প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করতে হয়।
আরও পড়ুন : আমাশয় রোগের চিকিৎসা ও মুক্তির উপায়
ম্যালেরিয়া কত প্রকার ও কী কী
ম্যালেরিয়া প্রধানত পাঁচ প্রকার। এর মধ্যে প্লাজমোডিয়াম নোলেসি পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত ম্যালেরিয়াটি ভিন্ন কেননা এটি মশার কামড়ে হয় না। এটি প্রাণি থেকে মানুষের শরীরে ছড়ায়। এ রোগের প্রকারগুলো হল-
রোগের নাম | বর্ণনা |
---|---|
বিনাইন টারশিয়ান ম্যালেরিয়া | প্লাজমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স দ্বারা এ রোগ হয় । এ রোগে সাধারণত ৪৮ ঘন্টা পরপর জ্বর আসে। |
ম্যালিগন্যান্ট টারশিয়ান ম্যালেরিয়া | প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম দ্বারা এ রোগ হয়। সাধারণত ৩৬-৪৮ ঘন্টা পরপর জ্বর আসে। |
কোয়ার্টার্ন ম্যালেরিয়া | প্লাজমোডিয়াম ম্যালেরি দ্বারা এ রোগ হয়। সাধারণত ৭২ ঘন্টা পরপর জ্বর আসে। |
মৃদু টারশিয়ান ম্যালেরিয়া | প্লাজমোডিয়াম ওভেল দ্বারা এ রোগ হয়। সাধারণত ৪৮ ঘন্টা পরপর জ্বর আসে। |
প্লাজমোডিয়াম নোলেসি দ্বারা আক্রান্ত ম্যালেরিয়া | এ রোগ সাধারণত মশার কামড়ে হয় না। ম্যাকাক নামক এক প্রকার বানর থেকে এ রোগ ছড়ায়। এজন্য একে জুনটিক (Zoontic) ম্যালেরিয়া ও বলা হয়। |
ম্যালেরিয়া জ্বরের লক্ষণ বা উপসর্গ
এ জ্বরের বেশ কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ রয়েছে। এ লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তা না হলে এ জ্বর প্রাণঘাতি হতে পারে। লক্ষণগুলো হলো-
- নির্দিষ্ট সময় পরপর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে।
- জ্বর ১০৫-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়।
- বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া।
- মাথাব্যথা হওয়া।
- ক্লান্ত থাকা।
- হজমে গোলযোগ হওয়া ও ডায়রিয়া হওয়া।
- জ্বর ছেড়ে দিলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে চলে যায়।
- কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
- তলপেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
- শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া।
- হৃদস্পন্দন এর গতি বেড়ে যাওয়া।
- প্রচুর পানির পিপাসা লাগতে পারে।
- রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
- জন্ডিস হতে পারে।
- ৩৬-৪৮ ঘন্টা পরপর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে।
আরও পড়ুন : সাপে কাটলে কী করনীয়?
ম্যালেরিয়া জ্বরের পরীক্ষা
এ জ্বরের পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আপনার বেশকিছু তথ্য জানতে চাইবে এবং আপনি সাম্প্রতিক সময়ে কোথাও ভ্রমণ করেছেন কিনা সেটাও জানতে চাইতে পারে। এরপর ডাক্তার আপনাকে ব্লাড টেস্ট দিবে ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে যা নির্ণয় করা হবে তা হলো-
- আপনার রক্তে ম্যালেরিয়া জীবাণু আছে কিনা।
- কোন ধরনের ম্যালেরিয়া পরজীবী রয়েছে আপনার রক্তে।
- পরজীবীটি কোনো এন্টিবায়েটিক রেজিস্ট্যান্ট কিনা।
- ম্যালেরিয়া জ্বরটি কোনো জটিলতা সৃষ্টি করছে কিনা।
বেশ কয়েকটি ব্লাড টেস্ট করতে হবে। কোনো কোনো ব্লাড টেস্ট তাড়াতাড়ি হয়ে যায় আবার কোনোটি সম্পন্ন হতে কয়েকদিন লেগে যায়। তাই বিলম্ব না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
ম্যালেরিয়া জ্বরের চিকিৎসা বা প্রতিকার
এ জ্বরের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষা দিবেন রোগ নির্ণয়ের জন্য। রোগ ধরা না পড়লে পরপর তিনদিন পরীক্ষা করে রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা সাধারণত শুরু হয় কোন জীবাণুর আক্রমণে এ রোগ হয়েছে সেটা নির্ণয়ের পর। কারন আলাদা আলাদা জীবাণুর জন্য আলাদা আলাদা চিকিৎসা ব্যাবস্থা রয়েছে। সম্পূর্ণ রোগ নির্ণয় না করে চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব না। রোগ নির্ণয় করার পর ডাক্তার এন্টিম্যালেরিয়াল ওষুধ দিবেন। ডাক্তার সাধারণত নিম্নোক্ত চারটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে এ রোগের চিকিৎসা করে থাকেন –
- প্লাজমোডিয়াম গণের কোন জীবাণু দ্বারা এ রোগ হয়েছে।
- রোগীর হেলথ কন্ডিশন।
- আক্রমণকারী জীবানুর বিরুদ্ধে কোন ওষুধটি কার্যকরী।
- রোগী পূর্বে কোনো এন্টিম্যালেরিয়াল ওষুধ সেবন করেছে কিনা।
এদের মধ্যে প্রথম ধাপটি অর্থাৎ প্লাজমোডিয়ামের কোন জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে সেটা নির্ণয় করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। কেননা প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম ও প্লাজমোডিয়াম নোলেসি জীবাণু দুটি শরীরকে খুব দ্রুত আক্রমণ করে এবং রোগীকে খুব দ্রুত মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। অন্যদিকে প্লাজমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স, প্লাজমোডিয়াম ওভেল ও প্লাজমোডিয়াম ম্যালেরি তুলনামূলক ধীর গতিতে শরীরকে আক্রমণ করে। তাছাড়া এসব জীবাণুর ওষুধও ভিন্ন। এক জীবাণুর ওষুধ অন্য জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকরী নয়।
এ রোগের চিকিৎসায় ডাক্তারকে রোগীর হেলথ কন্ডিশনও বিবেচনা করতে হয়। কেননা রোগী যদি দূর্বল হয় এবং তাকে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ওষুধ দেওয়া হয় তাহলে অনেক ক্ষেত্রে রোগী ওষুধের ধকল সহ্য করতে না পেরে তার অবস্থা আরও খারাপ হয় অথবা তার মৃত্যুও হতে পারে।
আরও পড়ুন : ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ, কারন ও চিকিৎসা
ম্যালােরিয়া জ্বরের ওষুধ ও টিকা
সাধারণত যেসব ওষুধ এ রোগে ব্যাবহৃত হয় সেগুলো হলো-
- ক্লোরোকুইন ফসফেট।
- আর্টেমিসিনিন বেজড কম্বিনেশন থেরাপি (ACTs)।
এ ছাড়াও অন্যান্য এন্টিম্যালেরিয়াল ওষুধগুলো হলো-
- অ্যাটোভ্যাকুওন প্রোগোয়ানিল (ম্যালারন)।
- কুইনাইন সালফেট সাথে ডক্সিসাইক্লিন।
- প্রাইম্যাকুইন ফসফেট।
- নিভাকুইন।
- কেমোকুইন।
- অ্যাভলোক্লোর।
- প্যালাড্রিন।
এ রোগের টিকার নাম হলো RTS,S বা “Mosquirix”. দীর্ঘ ৩০ বছর গবেষণা করে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন ও পাথ ম্যালেরিয়া (PATH Malaria) এ যুগান্তকারী টিকার আবিষ্কার করে। এ টিকায় সাধারণত ৪টি ডোজ দেয়া হয়।
ম্যালেরিয়া জ্বরের কারণ কী
এ জ্বরের প্রধান কারণ এককোষী প্লাজমোডিয়াম গণের পাঁচ পরজীবী। স্ত্রী এনোফিলিস মশার কামড়ে এ পরজীবী মশার দেহ থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। প্রথমে এ মশা ম্যালেরিয়া আক্রান্ত কোনো রোগীকে কামড়ায়। ফলে ঐ রোগীর দেহ থেকে জীবাণু মশার শরীরে প্রবেশ করে। মশার শরীরে প্রবেশ করার পর এ জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে থাকে। এই মশাটি পুনরায় যখন আরেকজন সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ায় তখন সুস্থ ব্যক্তির শরীরে জীবাণুটি প্রবেশ করে এবং ঐ সুস্থ ব্যক্তিটি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়।
ম্যালেরিয়া রোগীর খাবার
প্রতিটা রোগীরই একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তাকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে। এ রোগের জন্য কোনো নির্দিষ্ট খাবার নেই। তবে রোগীকে নিশ্চিত করতে হবে সে যাতে পুষ্টিকর খাবার খায়। কেননা পুষ্টিকর খাবারের ফলেই তার শরীর জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি পাবে। এ রোগ হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এমন খাবার গ্রহণ করাই উত্তম। রোগী যেসকল খাবার খেতে পারে তা হলো-
১। পানীয় পান : ম্যালেরিয়া হলে জ্বর হয়। জ্বর সাধারণত দেহের ক্যালোরির প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে দেয়। তাই জ্বর হলে দেহে প্রচুর ক্যালোরির দরকার পড়ে। বিভিন্ন পানীয় যেমন গ্লুকোজ, আখের রস, ডাবের পানি, ফলের জুস ইত্যাদি শরীরে তাৎক্ষণিক ক্যালোরি সরবরাহ করে।
২। পরিমাণমত প্রোটিন : এ রোগে সাধারণত দেহের অভ্যন্তরে প্রচুর টিস্যু ক্ষয় হয়। পরিমাণমত প্রোটিন ও শর্করা খেলেই এ টিস্যু দ্রুত উৎপন্ন হয়। এসময়ে যেসব প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য খেতে পারেন তা হলো দুধ, মাছ, মুরগীর মাংস, ডিম ইত্যাদি।
৩। ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার : এ রোগে প্রচুর ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। গাজর, পাকা পেঁপে এসব ফলে ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। লেবু, মালটা, কমলা, কমলালেবুতে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। এসব খাওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার ও খেতে হবে।
৪। বাদাম : বাদাম অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার এবং এ রোগে বাদাম অত্যন্ত উপকারী।
৫। স্বল্পমাত্রায় ফ্যাট বা চর্বি : ফ্যাট শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় কিন্তু অবশ্যই পরিমাণমত গ্রহণ করতে হবে। এ রোগের সময় স্বল্পমাত্রায় বাটার, পনির, ঘি, মাছের তেল ইত্যাদি গ্রহণ করা যেতে পারে।
৬। ভেজিটেবল স্যুপ : এ রোগ হলে স্বাস্থসম্মত ভেজিটেবল স্যুপ খান।
৭। ডাল এবং ডালের খিচুড়ি : পাতলা মসুর ডাল কিংবা ডালের খিচুড়ি এ রোগের জন্য বেশ উপকারী। ডালে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
৮। বিশুদ্ধ পানি : সবশেষে প্রচুর পরিমানে বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
কী কী খাবেন না
অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীর মতো ম্যালেরিয়া রোগীর ও বেশকিছু খাবার পরিহার করতে হবে। সেগুলো হলো-
১। অধিক আঁশযুক্ত খাবার : অধিক আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন শাক ও শাকের ডাটা, মোটা খোসাযুক্ত ফল ইত্যাদি।
২। উচ্চমাত্রায় চর্বিযুক্ত খাবার : এ রোগ হলে উচ্চমাত্রায় চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন বিশেষ করে তেল/চর্বিতে ভাজা খাবার, গরু-ছাগল-মহিষের মাংস, অধিক পরিমাণে বাটার-ঘি-পনির ইত্যাদি।
৩। প্যাকেটজাত খাবার : বিভিন্ন প্যাকেটজাত খাবার পরিহার করুন যেমন চিপস, ডাল ভাজা, চানাচুর, বিভিন্ন ফ্রাই ইত্যাদি।
৪। ঝাল ও মশলাযুক্ত খাবার : এ রোগে ঝাল ও মশলাযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। তাছাড়া এসকল খাবার সম্পূর্ণ পরিহার করাই স্বাস্থ্যসম্মত।
৫। চা ও কফি : এ রোগ হলে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত চা ও কফি থেকে বিরত থাকুন।
৬। কেক ও পেস্ট্রি : কেক ও পেস্ট্রিতে প্রচুর ক্রিম থাকে এবং কৃত্রিম মিষ্টিজাতীয় উপাদান থাকায় এ খাবার বর্জন করুন।
৭। সস এবং আচার : অনেকেই খাবারের সাথে সস এবং আচার খেতে পছন্দ করেন। এ রোগ হলে সস এবং আচার থেকে বিরত থাকতে হবে।
৮। এলকোহল : এ রোগে আক্রান্ত রোগী এলকোহল গ্রহণ করতে পারবে না।
৯। কোমল পানীয় : বিভিন্ন বোতলজাত বা ক্যানজাত কোমল পানীয় পরিহার করতে হবে।
আরও পড়ুন : জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ।
ম্যালেরিয়া কিভাবে ছড়ায়
প্লাজমোডিয়াম পরজীবী বহনকারী মশা কামড়ালে এ রোগ হয়। মশাদের খাদ্য হলো গাছপালা, ফলমূল এর রস। রক্ত এদের প্রধান খাদ্য নয়। পুরুষ মশারা মানুষকে কখনো কামড়ায় না। কিন্তু স্ত্রী মশাদের পেটে যখন ডিম থাকে তখন ডিমের পুষ্টির জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়। এ অবস্থায় স্ত্রী মশারা রক্ত পান করে থাকে। একজন ম্যালেরিয়া রোগীকে যখন স্ত্রী এনোফিলিস মশা কামড়ায়, তখন মশার শরীরে রক্তের সাথে প্লাজমোডিয়াম পরজীবী ও প্রবেশ করে। এ পরজীবী মশার শরীরে যৌন পদ্ধতিতে বংশবৃদ্ধি করে। তারপর এ মশা যখন আরেকটি সুস্থ মানুষকে কামড়ায় তখন প্লাজমোডিয়াম পরজীবী ঐ মশা থেকে মানুষটির শরীরে প্রবেশ করে অযৌন পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে এবং ম্যালেরিয়া জ্বর সৃষ্টি করে।
ম্যালেরিয়া রোধে করণীয় বা প্রতিরোধের উপায়
সরকার এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই এ রোগকে পুরোপুরি নির্মূল করতে পারে। এ রোগকে সম্পূর্ণ নির্মূল না করলে এ রোগ মহামারী আকারও ধারণ করতে পারে। এ রোগ রোধে করণীয় বা প্রতিরোধের উপায়গুলো নিচে দেওয়া হল-
১। এনোফিলিস মশা ঝোপ ঝাড়, ডোবা নালা, গর্ত ইত্যাদিতে ডিম পেড়ে বংশবিস্তার করে। তাই বসতবাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাড়, ডোবা নালা, গর্ত ইত্যাদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
২। ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারী ব্যবহার করুন।
৩। সম্পূর্ণ শরীর ঢাকা থাকবে এমন জামা কামড় পড়ুন। তাহলে মশা কামড়াতে পারবে না।
৪। রাতের বেলায় বাহিরে গেলে শরীরে মশা তাড়ানোর ক্রিম ব্যবহার করুন।
৫। মশারী টাঙ্গিয়ে ঘুমাতে না পারলে মশা বিতাড়িত করার স্প্রে ব্যবহার করুন।
৬। এরোসল, কয়েল, মশার বিভিন্ন স্প্রে, মশার ক্রিম ইত্যাদি ব্যবহার করুন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় সন্ধ্যার একটু আগেই মশারী টাঙ্গিয়ে মশারীর ভিতর বসে থাকা। কেননা এরোসল, কয়েল, মশার ক্রিম ইত্যাদি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
৭। মশার লার্ভা ও পিউপা ধ্বংস করার ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো পানিতে মশার ডিম ফুটে লার্ভা বা পিউপা দশায় থাকলে ঐ পানিতে কেরোসিন বা পেট্রোল জাতীয় পদার্থ ছিটিয়ে দিলে লার্ভা বা পিউপাগুলো মারা যাবে। এছাড়াও BHC, ডায়েলড্রিন ইত্যাদি কিটনাশক ব্যাবহার করা যায়। প্রাকৃতিকভাবে নিধন করতে চাইলে ঐ পানিতে গাপ্পি, কই, তেলাপিয়া, পুঁটি, টাকি ইত্যাদি মাছ ছেড়ে দিলেই হবে।
আরও পড়ুন : মানব দেহে ম্যালেরিয়া পরজীবীর জীবনচক্র
Frequently Asked Questions (FAQs)
প্রশ্ন : ম্যালেরিয়া শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ম্যালেরিয়া শব্দের ইংরেজি শব্দ হচ্ছে ‘Malaria’. ম্যালেরিয়া শব্দটি ইতালিয়ান শব্দ Mala ও aria এই দুটি শব্দ মিলে গঠিত যার অর্থ Bad Air বা খারাপ বাতাস। প্রাচীনকালে মানুষ মনে করতো ম্যালেরিয়া দূষিত বায়ুর ফলে হয়ে থাকে এবং তাই তারা এই রোগের এমন নামকরণ করে।
প্রশ্ন : ম্যালেরিয়া কি ভাইরাস ঘটিত রোগ?
উত্তর: না, এটি ভাইরাসঘটিত রোগ নয়। এর জীবাণু প্লাজমোডিয়াম গণের এককোষী প্রোটোজোয়া।
প্রশ্ন: বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস কবে?
উত্তর: ২৫ এপ্রিল বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস।
প্রশ্ন: ম্যালেরিয়া জীবাণুর বৈজ্ঞানিক নাম কী?
উত্তর: Plasmodium vivax, Plasmodium falciparum, Plasmodium ovale, Plasmodium malariae, Plasmodium knowlesi.
প্রশ্ন: ম্যালেরিয়া কোন ভাষার শব্দ?
উত্তর: ম্যালেরিয়া ইতালিয়ান ভাষা Mala ও aria থেকে আগত।
প্রশ্ন: ম্যালেরিয়া জ্বরের তাপমাত্রা কত?
উত্তর: এ জ্বরে রোগীর তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রী ফারেনহাইট থেকে ১০৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার বেশিও হতে পারে।
প্রশ্ন: ম্যালেরিয়ার জীবাণু কে আবিষ্কার করেন?
উত্তর: ম্যালেরিয়ার জীবাণু আবিষ্কার করেন Dr. Alphonse Laveran এবং ম্যালেরিয়ার জীবাণু যে স্ত্রী এনোফিলিস মশা বহন করে সেটির আবিষ্কার করেন স্যার রোনাল্ড রস।
প্রশ্ন : ম্যালেরিয়া মশার /স্ত্রী এনোফিলিস মশার ছবি?
উত্তর:
Image: Pixnio
প্রশ্ন: WHO স্বীকৃত ম্যালেরিয়ার টিকা কোনটি?
উত্তর : RTS,S
Disclaimer :এ ওয়েবসাইটে দেওয়া সকল তথ্য শুধুমাত্র জানার জন্য। রোগীকে সরাসরি না দেখে এবং রোগীর পরীক্ষা না করে রোগ এবং রোগের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই নিজে নিজে কোনো ওষুধ খাবেন না। অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।