আমাশয় কি ?
আমাশয় হলো পরিপাকতন্ত্রের একধরনের ইনফেকশন যার কারনে রক্ত ও মিউকাস মিশ্রিত পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। এ রোগ হলে পায়খানার সাথে যে মিউকাস বের হয় তাকে ‘আম’ বলে। এ রোগের শুরুর দিকে সাধারণত রক্ত আসে না। শুরুর দিকে শুধু মিউকাস আসে। কিন্তু রোগের মাত্রা বেড়ে গেলে একসময় রক্তমিশ্রিত পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। এ রোগের শুরু থেকেই চিকিৎসা নিলে সাধারণত কয়েকদিনেই এ রোগ ভালো হয়ে যায়। সাধারণত এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা কিংবা শিগেলা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে এ রোগ হয়ে থাকে।
আমাশয় কত প্রকার ও কী কী
আমাশয় প্রধানত দুই প্রকার। আক্রমণকারী জীবাণুর উপর ভিত্তি করে এ রোগকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়।
১। ব্যাসিলারি আমাশয়
এ আমাশয় শিগেলা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের মাধ্যমে হয়ে থাকে। শিগেলা ব্যাকটেরিয়া দেখতে দন্ডাকার হওয়ায় এদের ব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া ও বলা হয়। শিগেলা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হওয়ায় এ ধরনের আমাশয়কে শিগেলোসিস ও বলা হয়।
২। অ্যামিবয়েড আমাশয়
এ আমাশয় এককোষী অ্যামিবা দ্বারা আক্রমণের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এ এককোষী অ্যামিবার নাম হলো এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা। অ্যামিবা দ্বারা আক্রান্ত হয় বলে এ ধরনের আমাশয়কে অ্যামিবায়াসিস ও বলা হয়।
আমাশয় কেন হয়?
এ রোগ হওয়ার বিভিন্ন কারন রয়েছে। কারনগুলো হলো –
- দূর্বল সেনিটেশনের জন্য এ রোগ হয়ে থাকে।
- অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।
- নোংরা হাতে খাবার খেলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- বাহিরের খোলা খাবার খেলে এ রোগ হতে পারে।
- দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এ রোগ হতে পারে।
- আক্রান্ত ব্যাক্তির সাথে ওরাল সেক্স কিংবা পায়ু সঙ্গমের কারনেও এ রোগ হয়ে থাকে।
এ রোগে আক্রান্ত রোগীর মলের সাথে এ রোগের জীবাণু বেরিয়ে আসে এবং অপরিচ্ছন্ন খাবার কিংবা পানির সাথে মিশে গিয়ে আরেকজন সুস্থ ব্যাক্তির পেটে যায়। এভাবেই এ রোগ একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়।
আমাশয় রোগের লক্ষণ
প্রত্যেকটা রোগেরই কিছু লক্ষণ রোগীর দেহে প্রকাশ পায়। সাধারণত জীবাণু আক্রমণের ১-৩ দিনের মধ্যেই এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেহেতু এ রোগ দুই প্রকার এবং দুই ধরনের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়, সেহেতু এই দুই ধরনের রোগের লক্ষণেও কিছুই ব্যাতিক্রম দেখা যায়।
ব্যাসিলারি আমাশয়ের লক্ষণ
এক্ষেত্রে যেসব লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় সেগুলো হলো :
- মলের সাথে মিউকাস বা শ্লেষ্মা বের হয়।
- মলের সাথে রক্ত যেতে পারে।
- পেট ব্যাথা হতে পারে।
- বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে।
- আক্রান্ত রোগীর জ্বর আসতে পারে।
- রোগীর ওজন হ্রাস।
- মলত্যাগের সময় পায়ুপথে ব্যাথা অনুভব করা।
- সারাদিন ক্লান্ত থাকা।
- তলপেটে ব্যাথা অনুভব করা।
- পেট ফাঁপা থাকা।
অ্যামিবিক আমাশয়ের লক্ষণ
এক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় সেগুলো হলো:
- তলপেটে ব্যাথা।
- পেট ফাঁপা থাকা।
- রক্ত ও শ্লেষ্মামিশ্রিত পাতলা পায়খানা।
- রোগীর জ্বর আসা।
- বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া।
এ রোগের লক্ষণ গুলো সাধারণত ৫-৭ দিন ধরে থাকে। কিছু ব্যাতিক্রম ক্ষেত্রে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত লক্ষণগুলো থাকতে পারে। সঠিক চিকিৎসা না করালে এ রোগ চরম আকার ধারণ করতে পারে। শরীরে পানিশূন্যতা থেকে শুরু করে মৃত্যুঝুঁকি ও থাকে।
আমাশয় রোগের চিকিৎসা
দুই ধরনের আমাশয়ের জন্য দুই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নির্ধারণ করবেন কোন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রোগীর জন্য উপযুক্ত হবে।
আরও পড়ুন : পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়
ব্যাসিলারি আমাশয়ের চিকিৎসা
ব্যাসিলারি আমাশয় হয় মূলত শিগেলা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে। এ ধরনের আমাশয়ে সাধারণত কোনো ওষুধ গ্রহনের প্রয়োজন পড়ে না। এটি ৩-৭ দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। যে সকল নিয়ম মেনে চলতে হবে তা হলো –
১। রোগীকে প্রচুর পরিমানে পানীয় পান করতে হবে। ২। প্রতিবার মলত্যাগ করার পর স্যালাইন খেতে হবে। এ রোগের সবচেয়ে বড় ওষুধ হচ্ছে স্যালাইন।
৩। স্যালাইন ছাড়াও অন্যান্য পানীয় খেতে হবে যেমন বিশুদ্ধ পানি, ডাবের পানি, চিনির শরবত, বিভিন্ন ফলের জুস ইত্যাদি।
সাধারণত এ চিকিৎসায়ই ৩-৭ দিনের মধ্যে এ রোগ ভালো হয়ে যায়। তবে ৩ দিনের ভিতর ডায়রিয়া ভালো না হলে রোগীকে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে কিছু এলোপ্যাথিল ওষুধ ও এন্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দিবেন।
অ্যামিবিক আমাশয়ের চিকিৎসা
অ্যামিবিক আমাশয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত ওষুধের প্রয়োজন পড়ে। প্রচুর পরিমাণে পানীয় পান করার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিছু এলোপ্যাথিক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিবেন। সে ওষুধগুলো যথাযথ পদ্ধতিতে সেবন করলে এক সপ্তাহের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়।
আরও পড়ুন : ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ, কারন ও চিকিৎসা
আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ওষুধ ও এন্টিবায়েটিক
ব্যাসিলারি আমাশয়ের ক্ষেত্রে
এক্ষেত্রে সাধারণত কোনো ওষুধ কিংবা এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়ে না। তবে ৩ দিনের মধ্যে ডায়রিয়া বন্ধ না হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এন্টিবায়েটিক সেবনের পরামর্শ দিবেন। এন্টিবায়োটিকের সম্পূর্ণ কোর্স অবশ্যই পূরণ করতে হবে। তা না হলে রোগীর শরীরে ওই ব্যাকটেরিয়ার এন্টিবায়েটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া তৈরী হবে। এক্ষেত্রে যেসকল এন্টিবায়েটিক ব্যাবহার করা হয় তা হলো-
- সিপ্রোফ্লোক্সাসিন
- ওফ্লক্সাসিন
- লেভোফ্লোক্সাসিন
- এজিথ্রোমাইসিন ইত্যাদি।
অ্যামিবিক আমাশয়ের ক্ষেত্রে
এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করতে কিছু এলোপ্যাথিক ওষুধের প্রয়োজন হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যে সকল ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন তা হলো –
- মেট্রোনিডাজোল (ফ্ল্যাজিল)
- টিনিডাজোল (টিনডাম্যাক্স)
- প্যারোমোমাইসিন
- আয়োডোকুইনল ইত্যাদি।
এছাড়াও এ রোগ চলাকালীন ব্যাথা ও জ্বর নিরাময়ে ডাক্তার প্যারাসিটামল সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন।
আরও পড়ুন : টাইফয়েড জ্বর ভালো করার উপায়!
আমাশয়ের ঘরোয়া চিকিৎসা
ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমেই এ রোগ থেকে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। নিচের পদ্ধতিগুলো মেনে চললে ঘরেই এ রোগের চিকিৎসা করা যায়। তবে অবশ্যই ২-৩ দিনের মধ্যে ডায়রিয়া ভালো না হলে অতিদ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
১। বেশি বেশি পানি পান করুন : এ রোগের অন্যতম প্রধান একটি লক্ষণ হলো পাতলা পায়খানা হওয়া বা ডায়রিয়া হওয়া। সাধারণত দিনে বেশ কয়েকবার পাতলা পায়খানা হতে পারে। পাতলা পায়খানার ফলে শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়। তাই শরীরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে পানির প্রয়োজন হয়। সুতরাং আমাশয় হলে বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করুন এবং প্রতিবার মলত্যাগের পর স্যালাইন খান।
২। পানীয় খাবার খান : শুধুমাত্র পানি কিংবা স্যালাইনের পাশাপাশি অন্যান্য তরল খাদ্য খেতে পারেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে উপকারী হলো ডাবের পানি।
৩। পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খান : এ রোগের ফলে ঘন ঘন মলত্যাগ হয় এবং এর ফলে স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। এজন্য উচ্চ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খান। বেশি বেশি সবুজ শাকসবজি ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান। আমাশয় রোগীদের খাদ্যের জন্য একটি জনপ্রিয় ডায়েট সিস্টেম হলো “BRAT diet”. এর পূর্নরূপ হলো –
Banana
Rice
Apple Sauce
Toast
তার মানে এ নিয়মটি মেনে চললে আপনাকে কলা, ভাত, আপেল সস ও টোস্ট খেতে হবে। এ খাবারগুলোর মধ্যে উচ্চমাত্রায় স্টার্চ, পটাশিয়াম ও পেকটিন রয়েছে যা এ রোগের জন্য খুবই উপকারি।
৪। কিছু খাবার বর্জন করুন : সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত আপনাকে কিছু খাবার বর্জন করতে হবে। যদিও এ খাবার গুলো সবসময়ের জন্য বর্জন করাই স্বাস্থ্যকর। এদের মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রায় তেল-চর্বিযুক্ত খাবার, ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার, কৃত্রিম মিষ্টিজাতীয় খাবার, ফ্রুক্টোজ সমৃদ্ধ খাবার।
৫। প্রোবায়োটিকযুক্ত খাবার খান : প্রোবায়োটিক হলো ক্ষুদ্র অণুজীব যা শরীরের জন্য উপকারী। অনেক উপকারী ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা এ রোগের জন্য ভালো। যেমন দইয়ে রয়েছে উপকারী ব্যাকটেরিয়া। তাই এ রোগ হলে দই খেতে পারেন।
৬। হরিতকি : হরিতকি একটি ঔষধিগুণ সম্পন্ন গাছ। বাংলাদেশে হরিতকি গাছ একসময় প্রচুর পাওয়া গেলেও আস্তে আস্তে এটি বিলুপ্ত হতে চলেছে। হরিতকি এ রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১/২ চা চামচ হরিতকির পাউডার এর সাথে ১গ্লাস কুসুম গরম পানি মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন।
৭। মেথি : মেথি আরেকটি ঔষধিগুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ যা এ রোগের জন্য উপকারী। দিনে দুই বার এক গ্লাস বাটারমিল্কের সাথে ১ চা চামচ মেথি গুঁড়া মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন।
আমাশয় রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা
বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েও এ রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। নিচে এদের কিছু তালিকা দেওয়া হলো –
১। হরিতকি ও মেথি : এ রোগের চিকিৎসায় হরিতকি ও মেথি অত্যন্ত উপকারী। হরিতকি ও মেথি কিভাবে ব্যবহার করবেন তা উপরে বর্ণনা করা হয়েছে।
২। হলুদ : হলুদ এ রোগ ছাড়াও অন্যান্য অনেক রোগ যেমন এসিডিটি, পেট ফাঁপা, পেট ব্যাথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমে সমস্যা ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রেও অনেক উপকারী।
৩। আদা : নিয়মিত আদা খেলে এ রোগ ভালো হয়ে যায়। আদা শুকিয়ে গুঁড়ো করে ১ গ্রাম আদা কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
৪। থানকুনি : থানকুনি এক ধরনের ঘাস যা অন্যান্য ঘাসের সাথে জন্মায়। থানকুনির ঝোল রান্না করে খেলে শরীরের অনেক উপকার হয়। তাছাড়া থানকুনি পাতার রস ছেঁকে গরম করে খাওয়া যেতে পারে। অনেকে আবার থানকুনি পাতার ভর্তাও খায়। থানকুনি একটি সুস্বাদু খাবার।
৫। অর্জুন : অর্জুন গাছের ছাল এ রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী বিশেষ করে রক্ত আমাশয়ের জন্য।
৬। কমলার রস : কমলার রসে ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে এবং এ রস পানিশূন্যতা থেকেও বাঁচায়। প্রতিদিন ৩-৪ গ্লাস কমলার রস এ রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
৭। বাটারমিল্ক : প্রতিদিন ৩-৪ গ্লাস বাটারমিল্ক এ রোগের জন্য উপকারী।
৮। কাঁচা পেঁপে : কাঁচা পেঁপে এ রোগের জন্য অনেক উপকারী। প্রতিদিন ১টি কাঁচা পেঁপে পানিতে সিদ্ধ করে খেতে পারলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
৯। আপেল সিডার ভিনেগার : আপেল সিডার ভিনেগারে সাধারণত এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে যা এ রোগের ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করতে সক্ষম। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার ভালো করে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
১০। ডালিম : শুধু ডালিম ফল নয়, ডালিমের পাতা ও গাছের ছাল ও এ রোগের জন্য উপকারী। ডালিম ফল খাওয়ার পাশাপাশি ডালিমের পাতা কিংবা গাছের ছাল।পানিতে সিদ্ধ করে ওই পানি পান করলে এ রোগ দ্রুত নিরাময় হয়।
১১। রসুন : এক চা চামচ সরিষার তেলে ১-২ কোয়া রসুন ভেজে ওই তেল পেটে মালিশ করলে পেটের ব্যাথার উপশম হয়।
১২। লেবু : লেবুতে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় প্রতিদিন লেবুর শরবত খেলে এ রোগ দ্রুত ভালো হবে।
আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা
নিয়মমাফিক খাবার খেলে এ রোগ খুব দ্রুত ভালো হয়ে যায়। এ রোগের ক্ষেত্রে যেসকল খাবার খেলে উপকারী হবে তা নিচে দেয়া হল-
১। কলা : এ রোগের ক্ষেত্রে কলা অত্যন্ত উপকারী। তাই এ রোগ হলে বেশি বেশি কলা খান।
২। সাদা ভাত : সাদা ভাতে প্রচুর স্টার্চ রয়েছে যা এ রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই এ রোগ হলে ভাত খান।
৩। পাউরুটি বা টোস্ট : পাউরুটি বা টোস্টে লো ফাইবার থাকায় এ রোগের জন্য উপকারী।
৪। আপেল : এ রোগ হলে বেশি বেশি আপেল খেতে পারেন।
৫। সবুজ শাকসবজি : এ রোগে সিদ্ধ করা সবুজ শাকসবজি খান বেশি বেশি।
৬। লেবু : লেবুতে এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় লেবু এ রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাছাড়া লেবুর শরবত পানিশূন্যতা কমায়।
৭। প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার : এ রোগে ঘনঘন পাতলা পায়খানা হওয়ায় শরীর থেকে প্রচুর পুষ্টি, ভিটামিন ও পানি বেরিয়ে যায়। তাই শরীরে প্রোটিনের অনেক চাহিদা তৈরী হয়। প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মুরগীর মাংস ও মাছ খান। গরু, ছাগল কিংবা মহিষের মাংসে চর্বি থাকায় কিছুদিন এ মাংস বর্জন করুন।
৮। গাজর : এ রোগের জন্য গাজর অত্যন্ত উপকারী তাই বেশি বেশি গাজর খান। তাছাড়া গাজরে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে।
৯। ডাবের পানি : ডাবের পানি এ রোগের মহৌষধ। পানিশূন্যতা দূর করার পাশাপাশি ডাবের পানিতে পটাশিয়াম রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
১০। দই : দইয়ে রয়েছে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বা প্রোবায়োটিক। দই এ রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
১১। আলু, টমেটো : এ রোগ হলে বাঁধাকপি, আলু ও টমেটো খান।
১২। খিচুড়ি : দুপুরের খাবার ও রাতের খাবারে খিচুড়ি খেলে এ রোগ খুব দ্রুত ভালো হবে।
আমাশয় হলে কি খাওয়া উচিত নয়
- ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার
- ভাজা পোড়া খাবার
- কৃত্রিম চিনিযুক্ত খাবার
- উচ্চমাত্রায় আঁশযুক্ত খাবার
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার (দই ছাড়া)
- প্যাকেটজাত খাবার
- চর্বিযুক্ত মাংস
- বাদাম
- কাঁচা শাকসবজি
- কফি ও কোমলপানীয়
- এলকোহল
- পেঁয়াজ
- ভূট্টা ও মটরশুঁটি
- ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকোলি
শিশুর আমাশয় হলে করণীয়
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা একটি স্বাভাবিক জিনিস। কিন্তু অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা বা পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া সত্যিই দুশ্চিন্তার কারন। এমতাবস্থায় কালক্ষেপণ না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বড়দের যেসব কারনে আমাশয় হয় সাধারণত বাচ্চাদেরও সেসব কারনেই আমাশয় হয়ে থাকে। তাছাড়া শিশুরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বুঝে না। না বুঝে নোংরা হাত বা নোংরা কোনো জিনিস মুখে দিয়ে ফেলে যার ফলে আমাশয়ের মতো রোগ হয়ে থাকে। শিশুর আমাশয় হলে যা যা করণীয় তা নিচে দেওয়া হলো :
- বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করবেন না। বন্ধ করলে শিশুর পানিশূন্যতা দেখা দিবে।
- শিশুকে স্যালাইন খাওয়ান।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে দিন।
- বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ান।
শিশুর আমাশয় রোধে করণীয়
শিশুর আমাশয় হলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আমাশয় প্রাণঘাতি নয় তবে তাই বলে মোটেও অবহেলা করা যাবে না। অবহেলা করলে আমাশয় প্রাণঘাতি হতে পারে। শিশুর আমাশয় রোধে করণীয় বিষয়গুলো হলো –
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বাস করুন।
- শিশুর চলাচলের জায়গা সর্বোচ্চ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখুন।
- বুকের দুধ খাওয়ান। বুকের দুধ শিশুর ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে।
- দূষিত পানি কিংবা খাবার শিশুকে খাওয়াবেন না।
- বাহিরের খোলা খাবার শিশুকে খেতে দিবেন না।
- শিশুকে আমাশয়ে আক্রান্ত ব্যাক্তির সংস্পর্শে নিবেন না।
- আক্রান্ত শিশুর ডায়পার সাবধানে পরিবর্তন করুন।
আমাশয় রোধে করণীয়
নিচের ধাপগুলো অবলম্বন করলে এ রোগ থেকে বেঁচে থাকা যায় –
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করতে হবে।
- বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
- খোলা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- পচা, বাসি খাবার খাওয়া যাবে না।
- খাওয়ার আগে হাত ভালোভাবে ধৌত করতে হবে।
- আমাশয় আক্রান্ত রোগীর ব্যাবহৃত থালা বাসন ব্যাবহার করা যাবে না।
- সর্বক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করতে হবে।
Frequently Asked Questions (FAQs)
প্রশ্ন: দীর্ঘস্থায়ী আমাশয় কী?
উত্তর: সাধারণ আমাশয় সাধারণত ৩-৭ দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু কিছু আমাশয় এর চেয়ে বেশি সময়, এমনকি ১ মাস ও স্থায়ী হতে পারে। একে দীর্ঘস্থায়ী আমাশয় বলে।
প্রশ্ন: কালো আমাশয় কী?
উত্তর: কালো আমাশয় বলতে কিছু নেই। আমাশয়ের সাথে রক্ত বের হলে সাধরণত মলের রং লাল হয়। এছাড়া বেশ কিছু কারনে কালো মলত্যাগ হতে পারে যেমন : কালো রংয়ের খাবার খেলে, আয়রনের ওষুধ খেলে, হজমে গোলযোগ দেখা দিলে, গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে, কোলন ক্যান্সার হলে ইত্যাদি।
প্রশ্ন: রক্ত আমাশয়ের লক্ষণগুলো কী?
উত্তর: স্বাভাবিক আমাশয়ের মতোই। তবে রক্ত আমাশয়ে মলের সাথে রক্ত নির্গত হয়।
প্রশ্ন: পায়খানায় আম কী?
উত্তর: আমাদের পরিপাকতন্ত্রের ভেতরের আবরণীতে বিভিন্ন কোষ থাকে, এর মধ্যে এক ধরনের কোষ হলো মিউকাস কোষ। এই মিউকাস কোষ মিউকাস বা শ্লেষ্মা ক্ষরণ করে যা আমাদের পরিপাকতন্ত্রকে পিচ্ছিল রাখে। পরিপাকতন্ত্র পিচ্ছিল থাকার কারনে এবং এই মিউকাস মলের সাথে মিশে মলকে নরম রাখায় মল সহজে বাইরে নির্গত হয়। এই মিউকাস না থাকলে আমাদের মল ইটের মতো শক্ত হতো এবং পায়ুপথ দিয়ে বের করা বেশ কষ্টসাধ্য হতো। আমাশয় হলে এ মিউকাসের পরিমাণ অধিক বেড়ে যায় এবং তখন একে আম বলা হয়।
প্রশ্ন: আমাশয় কি প্রাণঘাতি?
উত্তর: না আমাশয় মোটেও প্রাণঘাতি নয় তবে অবহেলা করলে প্রাণঘাতি হতে পারে।
প্রশ্ন: আমাশয় হলে কি ডিম খাওয়া যায়?
উত্তর: যাবে।
প্রশ্ন: রক্ত আমাশয় হলে কি খাওয়া উচিত না?
উত্তর: আমাশয় হলে যা যা খাওয়া উচিত না, রক্ত আমাশয়ের ক্ষেত্রেও তাই।
প্রশ্ন: আমাশয় হলে কি মাছ খাওয়া যায়?
উত্তর: অবশ্যই যাবে।
প্রশ্ন: আমাশয় হলে কি দুধ খাওয়া যায়?
উত্তর: না। দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য (দই বাদে) খাওয়া যাবে না। দই খাওয়া উপকারী হবে। শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
প্রশ্ন: আমাশয় হলে কি কলা খাওয়া যায়?
উত্তর: জ্বি অবশ্যই যাবে।
Disclaimer : এ ওয়েবসাইটে দেওয়া সকল তথ্য শুধুমাত্র জানার জন্য। রোগীকে সরাসরি না দেখে এবং রোগীর পরীক্ষা না করে রোগ এবং রোগের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই নিজে নিজে কোনো ওষুধ খাবেন না। অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
Reference:
- আমাশয় – উইকিপিডিয়া
- Dysentery – NHS
- Dysentery: Causes, Symptoms, Diagnosis, Treatment
- Food Science and Nutrition – NCBI
- Researchgate
- Home Remedies of Dysentery
