Skip to content

গনোরিয়া কি, কারন, লক্ষণ, চিকিৎসা ও মুক্তির উপায়

গনোরিয়া কী?

গনোরিয়া (Gonorrhea) হলো একটি সাধারণ এবং মারাত্মক যৌনবাহিত রোগ (STD), যা Neisseria gonorrhoeae নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। এটি পুরুষ ও নারী উভয়ের যৌনাঙ্গ, মূত্রনালী, গলা (throat), চোখ এবং মলদ্বার সংক্রমিত করতে পারে। গনোরিয়াকে অনেকে “the clap” নামেও চেনে।

এটি মূলত অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায় – যেকোনো ধরণের যৌন যোগাযোগ, যেমন যৌনমিলন, মুখমৈথুন (oral sex), বা পায়ুমৈথুন (anal sex) এর মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হতে পারে। অনেক সময় গর্ভবতী মা থেকে শিশুর মধ্যেও এই রোগ ছড়াতে পারে।

গনোরিয়া কি, কারন, লক্ষণ, চিকিৎসা ও মুক্তির উপায়

গনোরিয়া রোগের লক্ষণ

গনোরিয়ার লক্ষণ অনেক সময় সুস্পষ্ট হয় না, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে। অনেকেই সংক্রমিত হয়েও প্রথম দিকে কোনো লক্ষণ টের পান না। তবে সাধারণ লক্ষণগুলো নিচে দেওয়া হলো:

পুরুষদের ক্ষেত্রে

  • মূত্রত্যাগের সময় জ্বালাপোড়া

  • পুরুষাঙ্গ থেকে পুঁজ জাতীয় স্রাব (সাদা, হলুদ বা সবুজ বর্ণের)

  • পুরুষাঙ্গের মুখ লাল হয়ে যাওয়া বা ব্যথা

  • অণ্ডকোষে ব্যথা বা ফোলাভাব

  • যৌনমিলনের সময় অস্বস্তি

নারীদের ক্ষেত্রে

  • যোনি থেকে অস্বাভাবিক স্রাব

  • প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালাভাব

  • তলপেটে ব্যথা

  • অনিয়মিত পিরিয়ড

  • যৌনমিলনের সময় ব্যথা

  • জরায়ুর সংক্রমণ (Pelvic Inflammatory Disease) এর ঝুঁকি বাড়ে

উভয়ের জন্য (বিশেষ স্থানে সংক্রমণ হলে)

  • গলা সংক্রমণ: গলা ব্যথা, গিলতে কষ্ট

  • মলদ্বারে সংক্রমণ: চুলকানি, রক্ত পড়া, ব্যথা

  • চোখে সংক্রমণ: লালচে চোখ, পুঁজ পড়া

আরও পড়ুন : হার্ট এটাক এর লক্ষণ ও বাঁচার উপায়

গনোরিয়া রোগের ছবি

Gonorrhea-গনোরিয়া-রোগের-ছবি

Image source: Gonorrhoea – an overview | ScienceDirect Topics

গনোরিয়া কেন হয়?

গনোরিয়ার প্রধান কারণ হলো অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক। কিছু ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ বা অবস্থার কারণে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে:

  1. কনডম ছাড়া যৌনমিলন করা

  2. একাধিক যৌনসঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক

  3. অপরিচিত বা নতুন সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক

  4. যৌনপেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে যৌন মিলন

  5. যৌন রোগে আক্রান্ত কারও সঙ্গে সম্পর্ক

  6. মায়ের শরীর থেকে সদ্যজাত শিশুর মধ্যে সংক্রমণ

আরও পড়ুন : স্ক্যাবিস কি ? স্ক্যাবিস থেকে মুক্তির উপায়

গনোরিয়া রোগের চিকিৎসা

গনোরিয়া একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ, তাই এটি অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।

সাধারণত ব্যবহৃত ওষুধ

  1. Ceftriaxone (ইনজেকশন) – ১ ডোজ

  2. Azithromycin (ট্যাবলেট) – একসঙ্গে খাওয়ানো হয়

  3. Doxycycline – বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হতে পারে

চিকিৎসার সময় যে বিষয়গুলো মেনে চলা জরুরি

  • ওষুধ সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করতে হবে

  • চিকিৎসা চলাকালীন ও এরপর কিছুদিন যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকতে হবে

  • সঙ্গীকেও চিকিৎসা করাতে হবে, না হলে রোগ আবার ফিরে আসবে

  • নিজে থেকে ওষুধ পরিবর্তন বা বন্ধ করা যাবে না

গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায়

গনোরিয়া প্রতিরোধ বা মুক্তির জন্য কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর নিয়ম মেনে চলা জরুরি:

  1. প্রতিবার যৌনমিলনের সময় কনডম ব্যবহার করুন

  2. একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক না রাখা

  3. নিজের ও সঙ্গীর STD টেস্ট করানো

  4. সংক্রমণ হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া

  5. যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা

  6. সঙ্গীকে সৎভাবে জানানো এবং যৌথ চিকিৎসা নেওয়া

  7. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা

আরও পড়ুন : জেনে নিন মানবদেহের পরিপাকতন্ত্র কিভাবে কাজ করে

গনোরিয়া রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

গনোরিয়া চিকিৎসায় মূলত অ্যান্টিবায়োটিকই কার্যকর। তবে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি উপসর্গ কমাতে সাহায্য করতে পারে:

  1. পানি বেশি পান করুন – শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে

  2. রসুন – প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবে পরিচিত

  3. আদা ও মধু – প্রদাহ কমায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

  4. দুধ ও হলুদ – অ্যান্টিসেপ্টিক গুণ রয়েছে

  5. প্রোবায়োটিক খাবার (যেমন দই) – শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে

এসব পদ্ধতি প্রধান চিকিৎসার বিকল্প নয়, কেবল চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি সহায়ক হিসেবে নেওয়া যেতে পারে।

গনোরিয়া কত দিনে ভালো হয়?

সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা নিলে গনোরিয়া সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে উপসর্গ পুরোপুরি কমে যেতে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এছাড়া যদি রোগ দীর্ঘদিন চিকিৎসাবিহীন থাকে, তাহলে জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন:

  • বন্ধ্যাত্ব

  • জরায়ু সংক্রমণ

  • শুক্রথলিতে সংক্রমণ

  • মূত্রনালিতে স্থায়ী ক্ষতি

গনোরিয়া রোগের টেস্ট

গনোরিয়া চিহ্নিত করতে বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়। সঠিক ডায়াগনোসিস পেতে নিচের টেস্টগুলো ব্যবহার করা হয়:

  1. NAAT (Nucleic Acid Amplification Test)
    সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং দ্রুত ফলাফল দেয়।

  2. Urine Test
    মূত্র থেকে ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করা হয়।

  3. Swab Test
    যোনি, পুরুষাঙ্গ, মলদ্বার বা গলা থেকে স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা করা হয়।

  4. Culture Test
    ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর জন্য পরিবেশে রেখে পরীক্ষার মাধ্যমে সনাক্ত করা হয়।

সন্দেহ হলে অবশ্যই একজন যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ বা ইউরোলজিস্ট/গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।

গনোরিয়া পুরুষাঙ্গে ঘা হলে করণীয়

গনোরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির পুরুষাঙ্গে ঘা, পুঁজ বা প্রদাহ দেখা দিতে পারে। এরকম হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার:

  1. চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন

  2. ঘাটাঘাটি বা ঘষাঘষি করবেন না

  3. গরম পানিতে পরিষ্কার কাপড় চুবিয়ে হালকা করে চেপে রাখতে পারেন

  4. অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা শুরু করুন (শুধুমাত্র ডাক্তার নির্দেশিত)

  5. যৌন সম্পর্ক সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখুন যতদিন না রোগ নিরাময় হয়

  6. নিজের সঙ্গীকেও পরীক্ষা করান

অনেক সময় গনোরিয়ার সঙ্গে সিফিলিস বা হারপিস এর মত আরও মারাত্মক রোগও থাকতে পারে, তাই সঠিক পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি।

References